প্রকাশিত: ১:৩৩ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩
জামালগঞ্জ প্রতিনিধিঃ শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড ও মানুষের মৌলিক অধিকার হলেও সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার ফেনারবাঁক ইউনিয়নের আমানিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক “শংকর সমাজপতি” ২০১৭ সালে স্কুলে যোগদানের পর থেকেই মাসের পর মাস ক্লাস না করেই বেতন নিচ্ছেন তিনি। কয়েক মাস পর-পর স্কুলে গিয়ে তিনি শুধু হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়েই চলে আসেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্তর জন্যও তাকে দিতে হয়েছে টাকা। এর পরেও উপবৃত্তির টাকা পায়নি বহু শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন বরাদ্দের টাকায় কোন কাজ না করেই সিংহভাগ টাকা তিনি তছরুপ করা, বিদ্যালয়ের একটি ল্যাপটপ তার বাড়িতে রাখা সহ অন্তহীন অভিযোগ তুলে ধরেন আমানীপুর গ্রামের বাসিন্ধারা।
ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে দুই বছর পুর্বে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে অভিযোগ হলেও, অদৃশ্য কারণে তদন্ত কাজ করেননি বলে জানান এলাকাবাসী। ওই শিক্ষকের চরম অনিয়মের মূল কারন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এমনটিই ইঙ্গিত করে চরম ক্ষোব্ধতা প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি আমানিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে স্কুল বন্ধ ও তালা মারা পাওয়া যায়। সাংবাদিকদের উপস্থিতি জানতে পেরে আমানিপুর গ্রামের বাসিন্দারা ও বেশ কয়েকজন অভিভাবক জড়ো হয়ে তাদের মনের ক্ষুব্ধতা ব্যক্ত করেন। তবে সহকারী শিক্ষক আক্তার হোসেন একাই প্রায় সময় ক্লাস করান বলে জানান গ্রামবাসী।
গ্রামের বাসিন্ধা সুলতান মিয়া, নুরজামাল, মো: আলমগীর হোসেন, মো: রজব আলী, এরশাদ মিয়া, বলেন, প্রধান শিক্ষক ৩-৪ মাস পরপর স্কুলে এসে হাজিরা খাতায় একসাথে স্বাক্ষর দিয়ে যান।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ আক্তার হোসেন, প্রধান শিক্ষক দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকা ও তার সাথে যোগাযোগ না রাখায় সহকারী শিক্ষক হিসাবে তিনি অনেকটা অসুস্থ হয়ে একার পক্ষে বিদ্যালয় পরিচালনা করা কষ্টকর ও স্কুলে বিদ্যুৎ – পানির ব্যবস্থা না থাকায় স্কুলের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা ব্যহত হওয়ার অভিযোগ এনে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
নানান অভিযোগে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক শংকর সমাজপতির মুঠোফোনে বারবার ফোন দিলে বন্ধ পাওয়া যায়। এছাড়াও উপজেলার কিছু কিছু শিক্ষক বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস না করা ও ২ টার পর বিদ্যালয় বন্ধের অভিযোগ প্রায়ই শোনতে হচ্ছে। ২০১৯ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্রে প্রত্যেক স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বিএ (স্নাতক) পাস থাকার কথা থাকলেও সরকারী নির্দেশনা কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে নীতিমালা বিহীন মেট্রিকপাশ পরিচালনা কমিটির অনুগত সভাপতি রেখে কাজ করাচ্ছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় ও শয়ন কক্ষের পাশেই সিরাজুল ইসলাম শেখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বিএ পাশ থাকার কথা থাকলে তা চলছে উল্টো ভাবে। কোন পদক্ষেপ নেননি শিক্ষা কর্মকর্তা এমন অভিযোগ অভিভাবকদের।
অনেকের অনিয়মের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্রিকায় নিউজ হলেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম রাব্বী জাহান বলেন, ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে সত্যতা পেয়েছি। দুই বার শোকজ নোটিশ করেছি। চুরান্ত নোটিশের পর স্যার কে আমি তদন্ত রির্পোট দেব এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্যারের কাছে কাগজ প্রেরণ করবো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শরিফ উদ্দিন বলেন, অভিযোগ পেয়ে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত করে ৩ দিনের মধ্যে রির্পোট দিতে বলেছি। প্রতিবেতন পাওয়ার পরই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্যার কে সুপারিশ করবো। তিনি আরো বলেন, আমি কোন অনিয়মে জড়িত নই। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নীতিমালা বহিভুত সভাপতির বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান।
সম্পাদক ও প্রকাশক – জাকিয়া সুলতানা
ঠিকানা – সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল পয়েন্ট, সুরভী ১২/২ হাছন নগর সুনামগঞ্জ।
মোবাইল নাম্বার ০১৩১০৮৬৮৩১৩
email- noorerfouara94@gmail.com
Design and developed by Web Nest