সুনামগঞ্জে বছর বছর বন্যায় নিঃস্ব “মুহিব্বুল”

প্রকাশিত: ৪:২০ অপরাহ্ণ, জুন ২৩, ২০২৪

সুনামগঞ্জে বছর বছর বন্যায় নিঃস্ব “মুহিব্বুল”

মোঃ মোশফিকুর রহমান স্বপন, সুনামগঞ্জ

সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার গনিগঞ্জ
( শাহী ঈদগাহ বাড়ী) বাসিন্দা আলহাজ্ব ক্বারী মুহিব্বুল হক আজাদ।একটি মসজিদে ইমামতি করে সংসার চালান তিনি। তার ৪ ছেলে এবং ৪ কন্যা সন্তান রয়েছে। টানা পোড়েন সংসারে কষ্ট করে দিন কাটে মুহিব্বুলের।
তিনি বলেন, ‘গত ২০২২ সালের বন্যায় ঘরের ভেতরে বুক পরিমাণ উচ্চতায় পানি ছিল।পানিতে আমার ঘর বাড়ীতে রাখা সবকিছু নষ্ট হয়েছে। ঘরটি সম্পুর্ন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এলাকারএই অবস্থা থেকে আমি ঘুরে দাঁড়াতে আমার এক ছেলেকে লিবিয়ায় দেই।আমার জমি জিরাত বিক্রি করে, ছেলেকে লিবিয়ায় পাঠালাম।সেই দেশে পৌঁছে গেলে ছেলে আমার মাফিয়া চক্রের কাছে ধরা পড়ে।
দেশ থেকে ঋণ করে টাকা দিয়ে তাকে উদ্ধার করি। একে একে তিনবার মাফিয়া চক্রের কাছ থেকে আমার ছেলেকে উদ্ধার করতে প্রায় ৩৮ লক্ষ টাকা দেই।
এরপরে ছেলেকে লিবিয়া থেকে ইটালি পাঠাতে আরও,টাকার দরকার হয়। জমি জিরাত বিক্রি সহ ঋণ করে টাকা পাঠাই।
২৪ সালের প্রথম দিকে ছেলে লিবিয়া থেকে ইটালি যায়।
এখনও আমি প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দিন গুনছি।
গত সপ্তাহের ঈদুল আজহার দিন থেকে ভারি বৃষ্টি হওয়ায় এবং পাহাড়ি ঢলে আবারও বন্যায় আক্রান্ত হই।
একদিকে সন্তানকে নিয়ে চিন্তা, অপরদিকে একাধিক বার বন্যায় আক্রান্ত হয়ে একেবারে নিঃস্ব।ঋণের চাপ সইতে পারিনা।

‘পরিবারের সবাইকে নিয়ে পানিবন্দি আছি দিন পার করছি। পানির প্রবল ঢেউয়ে বাড়ির পেছনের টিনের বেড়া ভেঙে গেছে। নিজের সব সহায়-সম্বল হারিয়ে প্রায় পথে বসে যাচ্ছি। কী করে এই অবস্থা থেকে আবার ঘুরে দাঁড়াবো, বুঝতে পারছি না। নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে।
এত টাকা ঋণ পরিশোধ করা আমার পক্ষে সম্ভব না।
আমি মসজিদে ইমামতি করে সামান্য হাদিয়া পাই।
এমতাবস্থায় দেশে এবং বিদেশে বিত্তবানদের কাছে আমার দোয়ার দরখাস্ত রইল। ঋণ থেকে মুক্তি পেতে আমি সকলের সহায়তা চাই, দোয়া চাই।

শুধু মুহিব্বুল হক নয়,জেলায় মুহিব্বুলের মতো হাজারো মানুষ বছর বছর বন্যায় আক্রান্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।জেলায় প্রায় সাড়ে ছয় লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানিয়েছেন, জেলায় পাঁচ শতাধিক আশ্রয় কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে ২২ হাজার পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। তাদেরকে ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে।
কেউ অসুস্থ হলে তাৎক্ষণিক ভাবে চিকিৎসার জন্য মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে।

মোঃ মোশফিকুর রহমান স্বপন, সুনামগঞ্জ
তাং-২২/০৬/২৪