বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল ইসলামের পাশে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন

প্রকাশিত: ৫:৩৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৭, ২০২৪

বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল ইসলামের পাশে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন

রাজু আহমেদ রমজান, সুনামগঞ্জ:
দীর্ঘ ৪ যুগ পর পৈত্রিক সম্পত্তি ফিরে পেয়েছেন জাতীয় পদকপ্রাপ্ত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম শামসুল ইসলাম। দেশ মাতৃকার টানে ৭১ এর রণাঙ্গনে সম্মুখযুদ্ধে আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন জাতীর এই সূর্যসন্তান। দীর্ঘ ৫৩ বছর ধরে ছিলেন পৈত্রিক সম্পত্তি বঞ্চিত। অবশেষে সেই সম্পত্তি ফিরে পেয়ে এখন খুশমেজাজে রয়েছেন হুইল চেয়ারে চলাচলকারী দেশের প্রধান ৩ যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধার অন্যতম এ গ্রেডভূক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম সামছুল ইসলাম।

শনিবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে চলা ভ্রাম্যমাণ আদালতের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন- দীর্ঘ ৫৩টি বছরধরে পঙ্গুত্ববরণ অন্যদিকে পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত থাকায় একটি রাত শান্তিতে ঘুম আসেনি। দেশকে ভালোবেসে সম্মুখ সমরে আহত হয়ে কলকাতায় ও দেশে আজীবন চিকিৎসাধীন থেকেছি। সেই দেশে আমিসহ ৪ বোন ছিলাম পৈত্রিক সম্পত্তি বঞ্চিত। একমাত্র ছোট ভাইকে বিশ্বাস করে সম্পত্তি তদারকীর দায়িত্ব দিয়েছিলাম। দীর্ঘ ৪ যুগেরও বেশি সময় সে ভোগদখলে থাকলেও দু:খ ছিল না। শেষ পর্যন্ত আমার স্ত্রী ও বোনদের রেজিষ্ট্রি দলিলমূলে ক্রয়কৃত সম্পত্তি ছাড়াও সব সম্পত্তি নগদ টাকায় বন্ধক দিয়ে আমাদের বঞ্চিত করে রেখেছিল। এ দু:খ যখন বলার জায়গা ছিল না তখনই জীবনের শেষ লড়াইয়ের অংশ হিসেবে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট একেএম আব্দুল্লাহ বীন রশিদ মহোদয়ের কাছে যাই ২৫ জানুয়ারি। তাঁরা তাৎক্ষনিকভাবে আমার সম্পত্তির বিষয়টি দেখে দেয়ার জন্য বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুর রহমান মহোদয়কে নির্দেশ দেন। শনিবার ২৭ জানুয়ারি উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়ন পরিষদে ভ্রাম্যমান আদালত ও গ্রাম আদালত বসিয়ে যে রায় দিয়েছেন তাতে আমি খুশি হয়েছি। আজ থেকে আমি শান্তিতে ঘুমাতে পারবো। এখন আমার মনের বুঝা হালকা হয়েছে। জাতীর এই সূর্যসন্তানের
চোখেমুখে কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ দেখে আবেগাপ্লুত হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুল হক ও পরিষদের চেয়ারম্যান নুরে আলম সিদ্দিকী তপন। পরে এই দেশপ্রেমিককে বুকে জড়িয়ে ধরে বেশ কয়েকটি স্ত্রীরচিত্র তুলেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

অন্যদিকে আদালতের সিদ্বান্ত ঘোষণার আগেই অভিযুক্ত এসএম নুর ইসলাম কান্নাজড়িত কন্ঠে নি:শর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা চান তাঁর সহোদর এসএম সামছুল ইসলাম এর কাছে। প্রসঙ্গত, সামছুল ইসলামের সহধর্মিণী ফারজানা ইসলাম জুনু এর দলিলমূলে ক্রয়কৃত জমি ও দলিলকৃত জমির বন্ধকী অর্থ ফিরিয়ে দিয়ে আগামী ২৯ জানুয়ারির মধ্যে মালিকানা ও দখলদেহী যথারীতি নুরুল ইসলাম সমজিয়ে দিবেন বলে রায়ে সিদ্ধান্ত হয়। বাকী যেসব সম্পত্তি তিনি টাকার বিনিময়ে এককভাবে বন্ধক দিয়েছেন সেগুলোর টাকা ফেরত দিয়ে ভাই-বোনদের মধ্যে যার যার হিস্যানুযায়ী বন্টন করে দেবেন বলেও রায়ে সিদ্ধান্ত হয়। উল্লেখ্য, বিষয়টির সূরাহায় বিশ্বম্ভরপুর সদর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা শেখ আক্কাছ আলীকে তাৎক্ষনিকভাবে দায়িত্ব প্রদান করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি সাংবাদিক আল হেলাল, সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সদস্য হোসাইন মাহমুদ শাহীন,দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন এর জেলা প্রতিনিধি রাজু আহমেদ রমজান, সলুকাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য মোতালেব মিয়া, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ড বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়ন শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ সাদী,
চালবন গ্রামের সালিশী দ্বীন ইসলাম, হাশেম মিয়া, মিলন মিয়া, লামাপাড়া গ্রামের আব্দুল মান্নান, আবুল কাশেম, আব্দুল কদ্দুছ, তাহিরপুর উপজেলার লামাপাড়া গ্রামের মুহিত চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম শামসুল ইসলামের জামাতা হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীসহ উভয়ের স্বজন এবং স্হানীয় ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন।
##

বার্তা প্রেরক—–
রাজু আহমেদ রমজান
সুনামগঞ্জ
মোবাইল-০১৭৮৮৭৯০৯৫০ অথবা-০১৩১৯৩৮৭৯৬০