প্রকাশিত: ৯:৩০ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১৯, ২০২৩
আব্দুস সামাদ আফিন্দী , জামালগঞ্জঃ
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ তেলিয়া গ্রামে সুরমা নদীর ভাঙ্গনে স্বয়ং-সম্পুর্ন অনেক পরিবার আজ বাস্তুহারা পথে বসেছেন। বাপ-দাদার ভিটে বাড়িও ছেড়ে শতাধিক পরিবার অন্যত্র চলে গেছেন। এখনো ভাঙ্গন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পার করছেন এখানকার বসতিরা। বেশ কয়েক বছর ধরে ভাঙ্গনের কারনে বিলীন হয়েছে প্রায় শতাধিক ঘর-বাড়ি।
কেউ কেউ বাপ-দাদার ভিটেমাটি হারিয়ে অন্য বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে কোন রকম বেঁচে আছেন। বেশ কয়েক বছর পুর্বে ভাঙ্গন রোধে সরকারি প্রকল্পে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ও ব্লক দিয়ে ভাঙন রোধের কাজ করার পর কিছুটা ভাঙ্গন রোধ হলেও গ্রামের দক্ষিণ-পুর্বাংশে তেলিয়া-শাহাপুর বাঁধ পর্যন্ত এখনো ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে।
জানা গেছে, জামালগঞ্জে সুরমা নদীর তীরবর্তী গ্রাম- তেলিয়া, কামলাবাজ, নয়াহালট, লক্ষ্মীপুর, লালপুর-ওপারে গোলকপুর, বৌলাইগঞ্জ বাজার, রামপুর, আমানীপুর সহ বেশ কিছু এলাকায় প্রতি বছরেই থেমে থেমে নদী ভাঙ্গনে ভাঙ্গছে বসতবাড়ি ফসলী জমি। সম্প্রতি নদীগর্ভে চলে গেছে গড়ে প্রায় এক কিলোমিটার জায়গা। স্থনীয় বাসিন্ধারা জানান এতে কমপক্ষে ১০০ টির বেশি ঘর নিমজ্জিত হয়েছে নদীগর্ভে।
ভাঙ্গনের কারনে কেউ কেউ কিছু দিন খোলা আকাশের নীচে বসবাস করে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে উঠেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, তেলিয়া গ্রামে সুরমা নদীর করালগ্রাসে ভয়াবহ ভাঙন চলছে। অনেকেই বাড়ি-ঘর হারিয়ে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়েই কোন রকম টিকে আছেন। যদি; ভাঙ্গন রোধ সরকারের কোন সদয় দৃষ্টি হয়ে যায় এই আশায়।
তেলিয়া গ্রামে, হাবিব গনি, আব্দুল হক, মজুমদার, কামরুল ইসলাম আলমগীর, বাছিত মিয়া, ফজুলক, আবুল খায়ের বাদশা,পরিস্কার বিবি,শাহনাজ, আলী হোসেন,সাইদুল, শামীম, পুলক , মনিন্দ্র পাল, ভষণ বাবু, মাফিকুল আলম, শামছুল আলম, পলাশ তালুকদার, আ:হানিফ, এরশেদ আলী, নুর মিঞা, আ: রউফ, সিরাজ মিঞা, সাধু, খোকা, ইয়াকুব আলী, আছরব আলী, আইয়ুব আলী সহ আরো অনেকের বাড়ি ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বলে জানান স্থনীয়রা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আতিকুর রহমান জানান, নদী ভাঙ্গনের কারনে তেলিয়া গ্রামের প্রায় শতাধিক ঘর-বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। এখন তেলিয়া গ্রাম ও শাহাপুর বাঁধ বাজারের থেমে থেমে ভাঙ্গছে।
স্থানীয় বাসিন্ধা কামরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ভাঙ্গনের কারনে বহু পরিবার অন্যের বাড়িতে আশ্রিত অবস্থায় আছেন। আমার নিজের বাপ-দাদার ভিটে বাড়িও নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।
তেলিয়া গ্রামের বাসিন্ধা, আইয়ুব আলী বলেন, বাপ-দাদার ভিটা মাটি ঘর ভাইঙ্গা নিছে সুরমা নদী ভঙ্গনে। বহু মাইনসের জমিও ভাঙ্গছে। আমরার তিন ভাই’র ঘরও নদীতে নিয়া গেছে। এখন বহু কষ্টে অন্য জায়গায় কোন রকম বউ-বাচ্ছা নিয়া আছি।
নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিষ্কার বিবি বলেন, আমার সব ভাইঙ্গা নিয়ে। বাচ্চা কাচ্চা নিয়া অন্য মাইনষের বাড়িত আছি বলেই কেঁদে কেঁদে চোখ মুছেন। এখানের স্থানীয় বাসিন্ধা মজুমদার বলেন, আমরা এখানে স্থায়ী বাঁধ চাই। দীর্ঘ বছর ধরে ভাঙার কারণে আমরার বহু ঘর ভাংছে। বর্ষার সময় নদী আরো বেশী ভাঙ্গে। এই বছর অসময়ে নদী ভাঙা শুরু হয়েছে। আমারার কিছুই করার নেই, শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি আর আক্ষেপ করা ছাড়া কিছুই নেই।
এব্যাপারে জানতে চাইলে,পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (জামালগঞ্জ-১ শাখা) জাহিদুল ইসলাম জনি বলেন, তেলিয়া গ্রামের ভাঙ্গন থেকে শাহাপুর বাঁধ বাজার পর্যন্ত পাঁচশত মিটার দৈর্ঘ্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছ। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে নদী ভাঙ্গন রোধে এই প্রকল্পটি ফেব্রুয়ারিতেই (২০২৪) পাস হওয়ার কথা। প্রকল্পটি পাশ হলেই নীতিমালা অনুয়ায়ী কাজ শুরুর আশা করা যায়।
সম্পাদক ও প্রকাশক – জাকিয়া সুলতানা
ঠিকানা – সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল পয়েন্ট, সুরভী ১২/২ হাছন নগর সুনামগঞ্জ।
মোবাইল নাম্বার ০১৩১০৮৬৮৩১৩
email- noorerfouara94@gmail.com
Design and developed by Web Nest