প্রকাশিত: ৬:০৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১২, ২০২২
ভাটির কন্ঠ ডেস্ক :: সিলেট নগরীর সুরমা, মেঘনা-যমুনাসহ ২৭টিরও বেশি আবাসিক হোটেল-মোটেল অপরাধের নিরাপদ আস্তানায় পরিণত হয়েছে। অপহরণ, জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ে রয়েছে টর্চার সেলও। মাদক-জুয়াসহ অনৈতিক ব্যবসাসহ নানা ধরনের অপরাধ কর্মকা- পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া সুন্দরী তরুণী-কিশোরীদের চাকরি দেওয়ার কথা বলে হোটেল নিয়ে তাদেরকে জিম্মি করে অনৈতিক কাজ করতে বাধ্য করছে একটি চক্র। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় দিন দিন হোটেল-মোটেলে অপরাধীদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলছে। অনুসন্ধানেও মিলেছে নগরের হোটেল-মোটেলগুলোর নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডের তথ্য।
বন্দরবাজার এলাকার সুরমা মার্কেটের সুরমা আবাসিক, আলোচিত মেঘনা হোটেল, বিশেষ করে দক্ষিণ সুরমার যমুনা, শাপলা, সিতারা আবাসিক, হোটেল তিতাশ, হোটেল বিরতী, কদমতলী পুলিশ ফাঁড়ির সামনে যাত্রীসেবা পতিতালয়, হোটেল মার্টিন, হোটেল আগমন, হোটেল প্রবাস, লালধিঘীরপড়ের সোনালী পতিতালয়, ভাই ভাই আবাসিক, হোটেল নিরালা, বন্দরবাজারের হোটেল তালহা, হোটেল মহানগর, সবুজ বিপনী, জিন্দাবাজারের রাজমনি, তালতলার গুলশান, সুফিয়া, মেডিকেলের শিরিন, রজনীগন্ধা, হলি ভিউ, চৌধুরী হোটেল, আল সবুজ, দরগা গেইটের রোজ গার্ডেন, আম্বরখানার শেরাটনসহ অসংখ্য আবাসিক হোটল রয়েছে যেখানে প্রতিনিয়ত চলছে অসামাজিকতা।
এসকল হোটেলে ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে কক্ষ ভাড়া নিচ্ছে অপরাধীরা। তারা সময় সুযোগমতো টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে রুমে এনে পরিকল্পনামাফিক কার্যসিদ্ধি খুন করে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ নগরের মদিনা মার্কেটে একটি আবাসিক হোটেলে দুই তরুণী ধর্ষণের শিকার হন। রাতভর আলাদা দুটি কক্ষে আটকিয়ে রেখে পালাক্রমে তাদের উপর শারীরিক নির্যাতন করা হয়।
জানা যায়, বন্দরবাজারস্থ লালবাজার, লালদিঘিরপার, কালিঘাট, তালতলা, সুরমা মার্কেট, জিন্দাবাজার, দরগা গেইট, আম্বরখানা, সোবহানীঘাট, মেন্দিভাগ, কদমতলী ও রেলস্টেশন এলাকার অর্ধশতাধিক আবাসিক হোটেল রয়েছে। নামিদামি কিছুসংখ্যক হোটেল ছাড়া অধিকাংশ হোটেলে রাখা হচ্ছে না অতিথিদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য। আর এই কাজে হোটেল মালিক, ম্যানেজার ও কর্মচারী জড়িত রয়েছে। এ সুযোগে অপরাধীরা নিরাপদ হিসেবে হোটেল বেছে নিয়েছে। চলতি বছরে নগরের লালবাজারে একটি হোটেলে খুন হন হায়াত নামের এক পল্লী চিকিৎসক। এর আগে তালতলাস্থ হোটেল সুরমায় খুন পাথর ব্যবসায়ী আবুল কালাম। তারও আগে সোবহানীঘাটে হোটেল মেহেরপুর থেকে তরুণ-তরুণীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র জানায়, হোটেল-মোটেলগুলোতে খুন, অসামাজিক কার্যকলাপ, প্রতারণার মাধ্যমে নগ্ন ছবি ধারণ, চাঁদাবাজি, মাদক কেনাবেচা, সেবন ও জুয়ার আসরসহ নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। রাতভর চলে সুন্দরী নারী বাণিজ্যে। নিম্ন শ্রেণীর হোটেল থেকে উচ্চ দামের হোটেল-কটেজগুলোতে নানা দরদামে নিশি রমনীদের সঙ্গে মিলছে রাত কাটানোর সুযোগ। পাশাপাশি হোটেল কক্ষে গাঁজা, ফেন্সিডিল ও ইয়াবা সেবন করা হচ্ছে। এ নিয়ে পুলিশের কাছে বিস্তর অভিযোগ থাকলেও কম হচ্ছে অভিযান।
হোটেল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কয়েকজন জানান, প্রশাসনের সহায়তা ছাড়া কখনো হোটেল ব্যবসা করা সম্ভব নয়। এ জন্য তাদের প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হয়। কেউ যদি মাসোহারা দিতে অনীহা প্রকাশ করে তখন তল্লাশির নামে হোটেল ব্যবসায়ীদের নানা ধরনের হয়রানি করা হয়।
অপর একটি সূত্র জানায়, ইয়াবাসহ মাদক বিক্রির নিরাপদ জোন হিসেবে পরিচিত নগরের কাস্টঘর সুইপার কলোনি। এ তালিকায় রয়েছে লালদিঘির পার, লালবাজার, সুরমা মার্কেট, তালতলা, জিন্দাবাজারের আবাসিক হোটেলও। ইয়াবা বিক্রির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন হোটেলের কিছু নিরাপত্তাকর্মী ও কর্মচারী। তবে এদের বেশিরভাগই মাধ্যম হিসেবে বিক্রির কাজ করলেও মাদক মজুদকারী এবং গডফাদার হিসেবে রয়েছে ভিন্ন জন। যারা মূলত হোটেল-মোটেল ব্যবসা, কটেজ-ফ্ল্যাট পরিচালনার আড়ালে বিক্রি করে ইয়াবাসহ মাদকদ্রব্য। যাদের অনেকেই ওই এলাকার প্রভাবশালী বলেও প্রচার রয়েছে।
এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সুদীপ দাস বলেন, আবাসিক হোটেলসহ অপরাধীদের আস্তানাগুলো থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রায়ই হোটেলে তল্লাশিসহ অভিযান চালানো হয়। যেসব হোটেল বোর্ডারদের ভোটার আইডি কার্ড ও ছবি সংগ্রহ না করে রুম দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক – জাকিয়া সুলতানা
ঠিকানা – সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল পয়েন্ট, সুরভী ১২/২ হাছন নগর সুনামগঞ্জ।
মোবাইল নাম্বার ০১৩১০৮৬৮৩১৩
email- noorerfouara94@gmail.com
Design and developed by Web Nest