যেভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেন তারা

প্রকাশিত: ২:৪৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৮, ২০২২

যেভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেন তারা

ভাটির কন্ঠ ডেস্ক :: বিদেশে হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ৯ যুবককে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর মহানগর পুলিশ। অনলাইনে জুয়া খেলে হুন্ডির মাধ্যমে তারা হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে বলে জানা গেছে।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার (৭ ডিসেম্বর) সদর থানা পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ওই চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মো. নাসির মৃধা (৩০), মো. মারুফ হাসান (২৪), মো. জাহিদুল ইসলাম ওরফে রসুল (২২), মো. আশিকুর রহমান ওরফে আশিক (২৭), মো. কাউসার হোসেন (২৩), মো. রুবেল হোসেন (২৫), মো. আশিকুল হক (২৫), মো. আকরাম হোসেন রিপন (২৬) ও মো. মুরাদ হাসান (২৫)।

বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

এ সময় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার জিয়াউল হক, মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, উপ-পুলিশ কমিশনার আবু তোরাব মো. শামসুর রহমান, মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ, মো. হুমায়ূন কবির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার ডিসি (মিডিয়া) মো. আলমগীর হোসেন জানান, গ্রেফতারকৃতদের জব্দকৃত মোবাইল, বিকাশ, রকেট ও ব্যাংক হিসাব এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, বাংলাদেশে অবৈধ অনলাইন জুয়ার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসে ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে একটি বিশেষ ব্রাউজার ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজের উঠতি বয়সের যুবকদের আসক্ত করা হয়। পরে অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা।

তারা মালয়েশিয়া-দুবাইয়ের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট খুলে নিজেদের প্রকৃত পরিচয় গোপন করে যোগাযোগ করে থাকে। এই সার্ভারটি প্রধানত নিয়ন্ত্রণ করে থাকে আকাশ মালিক ওরফে রনি নামে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক দুবাই প্রবাসী যুবক। তিনি এটিকে ওয়েব সাইটের মাধ্যমে বিভিন্ন বিদেশি নম্বর ব্যবহার করে সারা বাংলাদেশের ৫টি লেয়ারে তথা অ্যাডমিন, সাইট সাব অ্যাডমিন, সুপার এজেন্ট, মাস্টার এজেন্ট ও ইউজার (রুট লেভেলের ব্যবহারকারী) লেয়ারে বিভক্ত করে। প্রতিটি লেয়ার তার উপরের লেয়ারের মাধ্যমে কার্যক্রম সম্পাদন করে থাকে। তার মধ্যে একজন রুট লেবেলের আগ্রহী অনলাইন জুয়াড়ি সাইটে প্রবেশ করে ক্লিক করলেই এক হাজার টাকার বিপরীতে ১০টি ডিজিটাল কয়েন প্রদান করে অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হয়।

এই ডিজিটাল কয়েন লেনদেন মূলত সারা বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট, ফুটবল লীগ, টেনিস এবং বর্তমানে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার মাধ্যমেও প্রধানত অনলাইনে জুয়া খেলা হয়। ব্যবহারকারী জয়ী হলে ডিজিটাল কয়েন ফেরত নিয়ে এর বিপরীতে আর্থিক লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টাকা গ্রহণ করে থাকে। হারলে তার পুরো ডিজিটাল কয়েনটাই পর্যায়ক্রমে জুয়া পরিচালনাকারীর কাছে জমা হয়ে যায়। ওই সাইটে ১ জন অ্যাডমিন, ১৪ জন সাইট সাব-অ্যাডমিন, ২৪০ জন সুপার এজেন্ট, দেড় সহস্রাধিক মাস্টার এজেন্ট এবং সারা দেশে প্রায় দুই লক্ষাধিক ইউজার রয়েছে বলে জানা যায়।

তিনি আরও জানান, জিএমপি সদর থানা কর্তৃক প্রথমে মাস্টার এজেন্ট নাসির গ্রেফতার হলে তার দেওয়া তথ্য, ব্যবহৃত মোবাইলের মেসেঞ্জার, হোয়টাস এ্যাপ চ্যাটিং ও এমএফএস (বিকাশ/নগদ/রকেট) যাচাই করে দেখা যায় যে, তার নিকট রুট লেবেলের প্রায় ৭০ জন ব্যবহারকারীর নিকট থেকে দৈনিক লক্ষাধিক টাকা সংগ্রহ করে তার ঊর্ধ্বতন সুপার এজেন্ট মারুফের নিকট প্রদান করে। মারুফকে গ্রেফতারের জন্য উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হলে সঙ্গে অপর ৭ জনেরও জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

তাদের ব্যবহৃত মোবাইল, মেসেঞ্জার, হোয়টাসএ্যাপ চ্যাটিং ও এমএফএস (বিকাশ/নগদ/রকেট) যাচাই করে দেখা যায় যে, সে তার ঊর্ধ্বতন সাইট সাব এডমিন হককে (ওয়েবসাইট নেম) একটি ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকের ১৪৮টি অ্যাকাউন্টে গত নভেম্বর মাসে ২ কোটি টাকার অধিক লেনদেন হয়েছে। এ হিসেবে বাংলাদেশে প্রায় ১ হাজার ৫০০টি মাস্টার এজেন্টের মাধ্যমে ১ মাসেই ৩ হাজার কোটি টাকার অধিক লেনদেন হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়; যা বাংলাদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। ফলে দেশ হতে পাচার হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।

এ সংক্রান্তে সদর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এ মামলা এবং সিআইডি কর্তৃক মানি লন্ডারিং আইনে মামলা গ্রহণের ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ