প্রশাসনের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ফের তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ রুটে অতিরিক্ত সিএনজি ভাড়া আদায়: জনদুর্ভোগ চরমে!

প্রকাশিত: ২:৩৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৫, ২০২৫

প্রশাসনের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ফের তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ রুটে অতিরিক্ত সিএনজি ভাড়া আদায়: জনদুর্ভোগ চরমে!

বিশেষ প্রতিনিধি::

​প্রশাসনের স্পষ্ট নির্দেশনা ও জনস্বার্থ উপেক্ষা করে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থেকে জেলা শহরগামী রুটে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলো আবারও যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নির্ধারিত ১০০ টাকার পরিবর্তে জোরপূর্বক ১২০ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে, যা নিয়ে স্থানীয় জনসাধারণ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

​ভোক্তভোগী যাত্রীদের অভিযোগ  স্থানীয় বাসিন্দা মাওলানা মোহাম্মদ জিসান মিয়া অভিযোগ করে বলেন, “আমরা পাঁচজন যাত্রী তাহিরপুর থেকে সুনামগঞ্জ পৌঁছে জন প্রতি ১০০ টাকা করে ভাড়া দিতে চাইলে, সিএনজি ড্রাইভার আমাদের কাছে ১২০ টাকা ভাড়া দাবি করেন। আমরা ১২০ টাকা ভাড়া দিতে আপত্তি করলে (নাম না জানা) সেই সিএনজি ড্রাইভার বলেন, ভাড়া ১২০ টাকা এবং আমরা সেটাই নেব। তোমারা এবং প্রশাসন কিছু করতে পারলে করো।” ড্রাইভারের এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

​অন্য এক ছাত্রও একই অভিযোগ করে বলেন, “তাহিরপুর থেকে সুনামগঞ্জ সিএনজি ভাড়া ১০০ টাকা পূর্ণ নির্ধারণ করা হলেও আমাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক ১২০ টাকা ভাড়া নিচ্ছেন সিএনজি ড্রাইভাররা। আমি ছাত্র হিসেবে এই অতিরিক্ত ভাড়া আমার জন্য জুলুম হয়ে যায়।”

​তাহিরপুর থেকে সুনামগঞ্জের আব্দুজ জহুর সেতু পর্যন্ত মোট দূরত্ব প্রায় ৩১ কিলোমিটার (গুগল ম্যাপ) থেকে ।
জানা যায়, এই (ওয়াজখালি) রুটে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০০-১২০ টি সিএনজি গাড়ি যাত্রী নিয়ে আসা-যাওয়া করে, যেখানে প্রতিদিন প্রায় ৫০০-৬০০ মানুষ সিএনজিতে যাতায়াত করেন। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং এ নিয়ে ড্রাইভারদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিত্যদিনের এই যাত্রাকে চরম দুর্ভোগে পরিণত করেছে।

​পর্যটকদের কাছ থেকে আরও বেশি ভাড়া:
অভিযোগ রয়েছে, সপ্তাহে দুই দিন—শুক্রবার এবং শনিবার—হাজারো পর্যটকের সমাগম ঘটলে সিএনজি ভাড়া ১৫০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়, যা পর্যটকদের জন্য চরম অর্থদণ্ড।

​প্রশাসনের হস্তক্ষেপেও বদলায়নি পরিস্থিতি:
​এই রুটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও সিএনজি একতরফা ভাবে ১২০ টাকা আদায় শুরু করলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র নিন্দা জানানো হয়। সেই সময় তৎকালীন ইউএনও মহোদয় বিষয়টি আমলে নিয়ে পুনরায় ১০০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে দেন।
​কিন্তু সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ, গত ২-৩ মাস ধরে সিএনজি চালকরা পুনরায় জোড় পূর্বক ১২০ টাকা ভাড়া আদায় শুরু করেছেন।
প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ফলে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে কর্মজীবী, শহরমুখী রোগী, শ্রমজীবী এবং শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

​এই বিষয়ে জানতে চাইলে সিএনজি স্ট্যান্ডের দায়িত্বরত ম্যানেজার মো: আজহার উদ্দিন বলেন, “তাহিরপুর থেকে সুনামগঞ্জ সিএনজি ভাড়া আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি বলবো ১০০ টাকা ই । কিন্তু এর মধ্যে গত কয়েক মাস ধরে ভাড়া নিয়ে একটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। যা আমার জন্য পক্ষে সামাল দেওয়া কষ্টসাধ্য। কোনো ড্রাইভার ১০০ টাকা নিচ্ছেন, আবার কোনো ড্রাইভার ১২০ টাকা নিচ্ছেন। তিনি শিকার করে বলেন, অনেক সময় এই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ে অনেক ড্রাইভার ঝগড়া করতে ও পিছুপা হন না। তবে খুব তাড়াতাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে বসে বিষয়টা সমাধানে নিয়ে আসার চেষ্টা করব।

​স্থানীয় বাসিন্দা মো: মিছবাহ উদ্দিন শিশির প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়ে বলেন, “১০০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়ে সিএনজি স্ট্যান্ডে প্রতিটি এলাকার ভাড়া উল্লেখ করে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

​তাহিরপুর সিএনজি স্টেশনের ঠিক কাছেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থাকা সত্ত্বেও কেন এমন পরিস্থিতি, তা নিয়ে জনগণের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের প্রশ্ন, “তাহিরপুর সিএনজি স্টেশন ঘেঁষেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়। তবুও কেন প্রশাসনের নীরব ভূমিকা? এতদিন ধরে এই দুর্ভোগ কেন পোহাচ্ছে জনগণ?”

​এই বিষয়ে, বর্তমান তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: মেহেদী হাসান মানিক বলেন, “তাহিরপুর থেকে সুনামগঞ্জ সিএনজি ভাড়া নিয়ে উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা মিটিংয়ে কথা হয়েছে, এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

​জনগণের প্রত্যাশা :
​স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত এই বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তাদের জোর দাবি, প্রশাসনের হস্তক্ষেপে দ্রুত সিএনজি ভাড়া যথাসম্ভব স্থায়ীভাবে ১০০ টাকায় নামিয়ে আনা হোক এবং যারা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ