হাওর বেষ্টিত সুনামগঞ্জ এক নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণায় সরব মনোনয়ন প্রত্যাশীরা

প্রকাশিত: ৪:১৪ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২, ২০২৫

হাওর বেষ্টিত সুনামগঞ্জ এক নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণায় সরব মনোনয়ন প্রত্যাশীরা

তাহিরপুর সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :. আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত না হলেও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এমন একটি রাজনৈতিক ঐকমত্য ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জে রাজনৈতিক মাঠে নাটকীয় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এক সময়ের আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ জেলায় জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর দৃশ্যপট পাল্টাতে শুরু করেছে । ফ্যাসিবাদী শাসনের অভিযোগে জনগণের আস্থা হারানো আওয়ামী লীগের শূন্যতা পূরণে মাঠে নেমেছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী।

সুনামগঞ্জ এক সংসদীয় আসনে এখন বিএনপির ব্যতিক্রমধর্মী তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও উন্নয়নমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন নেতাকর্মীরা।

নির্বাচনের ডামাডোল শুরু হওয়ার পর জামায়াতে ইসলামীও ব্যাপক তৎপর। তারা প্রার্থিতা ঘোষনা করে মাঠ চষে বেড়াচ্ছে।তারা নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচি নিয়ে জনগণের পাশে থাকার চেষ্টা করছেন ।

তবে ছাত্র-তরুণদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) নেতাকর্মীরা এখনো সরব হননি। নির্বাচনি মাঠে তাদের কোনো কার্যক্রম নেই।

সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর)
চারটি উপজেলা নিয়ে গঠিত জেলার বৃহত্তম আসনটি এক সময় ছিল বামপন্থীদের শক্ত ঘাঁটি, পরে আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে এলেও তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য নজির হোসেনের কারেসমেটিক নেতৃত্বে এটি হয়ে ওঠে বিএনপির দুর্গ। সাধারণ জনগণ বলছেন আওয়ামী লীগ বিহীন এ আসনে ভোটের মাঠে মূল লড়াই হবে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে। আসনটি দখলে নিতে এবার কাজ করছেন বিএনপির অন্তত সাতজন মনোনয়নপ্রত্যাশী। তারা হলেন: তাহিরপুর উপজেলা বি এনপি আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য প্রয়াত সাংসদ নজির হুসেন এর সহধর্মিণী বিশিষ্ট নারী নেত্রী সালমা নজির, তাহিরপুর উপজেলা বি এনপি আহ্বায়ক কমিটি সদস্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, তাহিরপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আনিসুল হক, ধর্মপাশা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান, আবদুল মোতালিব খান, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, যুক্তরাজ্য জাতীয়তাবাদী আইনজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার হামিদুল হক আফিন্দী লিটন,এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি নিজাম উদ্দিন।

তারা নানা কর্মসূচি নিয়ে জনগণের দ্বারে দ্বারে যাওয়ার পাশাপাশি দলের টিকিট নিশ্চিত করার জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। মনোনয়ন পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়বেন ভোটের মাঠে।

হাওর অধ্যুষিত এ আসনে আওয়ামীলীগের ঘাটিকে ভেঙে বিএনপির দূর্গ তৈরী করা রাজনৈতিক কবি বার বার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত নজির হুসেন এর সহধর্মিণী উচ্চ শিক্ষিত বিশিষ্ট নারী নেত্রী সালমা নজির বলেন, আমি একটি রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে উটা একজন মানুষ, আমার রক্তে মিশে আছে রাজনীতি, আমার স্বামী প্রয়াত নজির হুসেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই এলাকার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে গেছেন। এই এলাকার মানুষের জীবন মান উন্নয়নে তিনটি শুল্ক স্টেশন স্থাপন করে অত্র অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা সচল করে গেছেন। তিনি অত্র নির্বাচনী এলাকায় শিক্ষার মানউন্নয়নে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছেন।তিনি যাতায়াত ব্যাবস্থার উন্নয়নে কাজ করেছেন, তিনি স্বাস্থ্যসেবাকে মানুষের দৌড় গোড়ায় নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছেন।তিনি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মানুষের সেবায় নিয়োজিত তাকতেন আমি তার সহযাত্রী হিসেবে তাকে সহযোগিতা করছি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। আমার স্বামীর অসামাপ্ত কাজগুলো এগিয়ে নিতে এবং এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে দুর্নীতিমুক্ত চাঁদাবাজ মুক্ত সমাজ গড়তে আমি আপনাদের সহযাত্রী হতে চাই আমার জন্য আপনারা দোয়া করবেন।আমার স্বামীর জন্য দোয়া করবেন আল্লাহ যেন ওনাকে বেহেশত নসিব করেন।তিনি আশাবাদী দল তাকে মুল্যায়ন করবে, তবে দল যাকে মনোনয়ন দিবে আমরা তার সাথে সকলে মিলে কাজ করবো।

ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী কামরুজ্জামান কামরুল বলেন ছাত্রজীবন থেকেই আমি গণমানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলেছি । ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে নিজের জীবন বাজী রেখে রাজপথে ছিলাম।দলের যেকোন প্রয়োজনে আমি রাজপথে আছি এবং থাকবো।আমরা সকলকে নিয়ে রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। দলীয় টিকিট প্রাপ্তির ব্যাপারে ভীষণ আশাবাদী কামরুজৃজামান কামরুল বলেন জনমত জরিপে যিনি এগিয়ে থাকবেন, তিনিই হবেন এ আসনে বিএনপির কান্ডারী।’

বি এনপি মনোনয়ন প্রত্যাশী আনিসুল হক বলেন,আমি জনগনের ভালোবাস নিয়ে মাঠে আছি। বিগতদিনে আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে থেকে দায়িত্ব পালন করেছি।আমার বিশ্বাস দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।আমি সকলকে নিয়ে একটি সুন্দর সুখকর সুনামগঞ্জ এক গড়তে চাই।
অপরদিকে একক প্রার্থী নিয়ে জোর প্রচার চালাচ্ছে জামায়াত। এবার দলের জেলা আমির মাওলানা তোফায়েল আহমদ খানকে এ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘জামায়াত আমাকে যোগ্য মনে করে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এলাকার মানুষও একজন দক্ষ, দেশপ্রেমিক, ধর্মপ্রাণ ও সৎ লোককে প্রার্থী হিসেবে চাচ্ছিলেন। এবার ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় ভোটাররা একজোট হচ্ছে। আশা করি, বিজয় কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না।’

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ