লঞ্চঘাটে সিঁড়ি নির্মাণ দূর্নীতিতে ওয়ার্ল্ড ব‍্যাংকের ২০ লাখ টাকা লুটপাট

প্রকাশিত: ৮:১৩ পূর্বাহ্ণ, জুন ২১, ২০২৫

লঞ্চঘাটে সিঁড়ি নির্মাণ দূর্নীতিতে ওয়ার্ল্ড ব‍্যাংকের ২০ লাখ টাকা লুটপাট

স্টাফ রিপোর্টার :  সুনামগঞ্জ লঞ্চঘাট-পূর্ব ইব্রাহীমপুর খেয়াঘাটে সিঁড়ি নির্মাণের দূর্নীতিতে লুটপাট হয়েছে ওয়ার্ল্ড ব‍্যাংকের ২০ লাখ টাকা। গাটলাকে ছাউনি বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় গাটলার গেইটে ‘যাত্রী ছাউনি’ লেখার চেষ্টা করে পৌর কর্তৃপক্ষ। গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে চাওয়া ‘যাত্রী ছাউনি’ না পেতে এই বিষয় ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ সাঁটানো সাইন বোর্ডে প্রকল্পে স্পষ্ট করে লেখা আছে এটা সিঁড়ি (গাটলা) নির্মাণ প্রকল্প।

১৯ জুন বৃহস্পতিবার বিকালে গাটলার গেইটে ‘যাত্রী ছাউনি’ লেখার চেষ্টাকালে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করেন। পরে পৌর কর্তৃপক্ষ লেখা উঠিয়ে নিতে বাধ‍্য হন। এ ঘটনায় স্থানীয়রা সন্দেহ করছেন যে, কোন স্বার্থে এমন বেআইনী উদ‍্যোগ নিয়ে গাটলার গেইটে ‘যাত্রী ছাউনি’ লেখার চেষ্টা করেন পৌর কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয়রা জানান, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের আশ্বাস দেওয়া গ্রামবাসীকে যাত্রী ছাউনি পেতে বিরোধিতা করতে এই অপকৌশল চালানো হচ্ছে। পৌর কর্তৃপক্ষ বেঙ্গল ওয়াটারের অবৈধ বসতিদের পক্ষে থেকে এমন ষড়যন্ত্র করছেন। গাটলা নির্মাণের শুরু থেকে একাধিকবার অনিয়ম-দূর্নীতির প্রতিবাদ করে আসছেন গ্রামবাসী। কিন্তু কিন্তু দূর্নীতি থামছেই না। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন গ্রামবাসী।

নক্সাবিহীন সিঁড়ি নির্মাণে বিভিন্ন তথ‍্য সম্বলিত ইংরেজী সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে এবং লাপাত্তা ঠিকাদারের নাম উল্লেখ করে সুকৌশলে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে মোটা অংকের টাকা। স্থানীয়দের অভিযোগ তোয়াক্কা না করে অনিয়ম-দূর্নীতির মাধ‍্যমে সিঁড়ি নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ করা হয়েছে। এখন স্থানীয়দের প্রতিনিয়ত ঝুঁকিপূর্ণ চলাচলে হয়েছে ভোগান্তির আরেক নাম সিঁড়ি।

চলতি বছরের গত ২৮ জানুয়ারি দূর্নীতির মাধ‍্যমে সিঁড়ি নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল। কাজের পরিমাপ থেকে এই অনিয়ম, দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত এভাবেই নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হচ্ছে। কিন্তু পানির নিচে সিঁড়ির ধাপ অসম্পূর্ণ রয়েছে। সিঁড়ির ধাপ নির্মাণে ঢালাইয়ের সময় দুই একবার ধ্বসে পড়েছে। এতেও স্থানীয়রা অনিয়ম বন্ধে বাধা দেন। কিন্তু কেউ কথা শুনেন নি। সিঁড়ি নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনার একাধিক সংবাদ প্রকাশের পরও টনক নড়েনি সংশ্লিষ্টদের।

তবে সিঁড়ি নির্মাণের শুরুতে অনিয়ম-দূর্নীতি ধরা পড়ার পর সরেজমিন এসে পৌর কর্তৃপক্ষ স্থানীয়দের কাছে ভুল স্বীকার করেছেন। তারা বলেছিলেন এমন ভুল আর

হবে না। তারপর আবারও অনিয়ম-দূর্নীতি।

সিঁড়ির দৈর্ঘ‍্য-প্রস্থ পরিমাপ ::

সিঁড়ি নির্মাণের শুরুতে পরিমাপ করতে গিয়ে অনিয়ম, দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি করে বসেন পৌর কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারের লোকজন। তারা বেঙ্গল ওয়াটারের জায়গায় অবৈধভাবে বসবাসকারীদের এবং ব‍্যবসায়ীর প্রভাবের মূখে পড়ে দেড় ফুট সিঁড়ি সংকীর্ণ করে কাজ শুরু করেন।

পাইলিং বল্লির মাথা ছেড়ে বেইজ নির্মাণ ::

একাধিক স্থানে পাইলিং বল্লির মাথা ছেড়ে নেট স্থাপন করে

বেইজ দেওয়া হয়েছে। এই অনিয়ম স্থানীয়দের চোখে পড়ে। এই ভুল সংশোধন না করে সিঁড়ি নির্মাণ কাজ অব‍্যাহত থাকে। যা বর্তমানে সিঁড়ি ঝুঁকিতে আছে এবং অদূর ভবিষ‍্যতে সিঁড়ির ঝুঁকি বাড়বে।

সিঁড়ি ও ধাপে দূর্নীতি ::

সিঁড়ি নির্মাণে প্রশস্ততা কম, চওড়া হয়েছে বেশি। নদীর পানি ঘেঁষে যে সিঁড়ির ধাপ নির্মাণ করা হয়েছে, তা তড়িঘড়ি করে দূর্বল ও অগোছালোভাবে করা হয়েছে। স্থানীয়দের বাধা নিষেধ অমান‍্য করে বাইক উঠানামার ব‍্যবস্থা রাখা হয়েছে। অথচ নদীর উত্তরপাড়ে পাকা সিঁড়িঘাট নেই। বর্তর্মনে উভয় দিকে যাত্রী সাধারণ উঠানামা করতে দারুণ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বাইকের ব‍্যবস্থা রাখার কারণে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা খেয়ালে বা বেখেয়ালে হোচট খেয়ে পড়ে যাওয়া যেন নিত‍্যদিনের দূর্ঘটনা।

মেইন রোডে সংযুক্ত সিঁড়ির গোড়ায় গর্ত ::

মেইন রোডে সংযুক্ত সিঁড়ির গোড়ায় মাটি উত্তোলনের গর্ত থাকায় বৃষ্টির পানি ঝরণার ন‍্যায় নির্গত হচ্ছে। এতে পাকা রোড ও সিঁড়ি ধেবে যাওয়ার আশংকা বিদ‍্যমান।

সিঁড়ির গোড়ায় গেইট নির্মাণ ::

সিঁড়ির গোড়ায় গেইট নির্মাণ হয়েছে। কিন্তু দৃষ্টিনন্দন হয়নি।  রোদ বা বৃষ্টিতে কেউ দাঁড়াতেও পারবে না। কারণ দুই দিকে সিঁড়ি সংকীর্ণ থাকায় গা ঘেঁষে যাত্রী চলাচলে দারুণ সমস‍্যা সৃষ্টি হচ্ছে এবং দূর্ঘটনার মারাত্মক ঝুঁকি বেড়েছে।

ওয়ার্ল্ড ব‍্যাংকের অর্থায়নে ২০ লক্ষ টাকা ব‍্যয়ে নির্মিত সিঁড়ি নির্মাণে নক্সা সাঁটানো হয়নি, মানসম্মত বালু-পাথর, সিমেন্ট ও রড ব‍্যবহার করা হয়নি। কাজের ভাল ফিনিশিং নেই। ঠিকাদারের উপস্থিতি নেই। কিন্তু এই কাজ দেখভালে ব‍্যবহার করা হয়েছে পৌর কর্মচারী ‘আনিস’ নামের এক ব‍্যক্তিকে। এই কর্মচারী আনিসের দেখভালে এসব অনিয়ম দূর্নীতি হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। এই কারণে সিঁড়িতে উঠানামায় দীর্ঘদিন ভুগবে যাত্রী সাধারণ এবং সিঁড়ি বেয়ে উঠানামা বাইক পতিত হবে দূর্ঘটনায়।

বৃহস্পতিবার বিকালে গাটলার গেইটে ‘যাত্রী ছাউনি’ লেখার চেষ্টাকালে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে সুনামগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী কালী কৃষ্ণ পাল এই প্রতিবেদককে বলেন, ওয়ার্ল্ড ব‍্যাংকের এই কাজে ওয়ার্ক অর্ডারের নিয়ম অনুযায়ী তা লিখে দিতে হয়। তবে গাটলার গেইটে না লিখলে ও কিছু হবে না। আমি লিখা সরিয়ে নেওয়ার ব‍্যবস্থা করছি।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ