যাদুকাটা সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করার দাবিতে মানববন্ধন

প্রকাশিত: ২:০৩ অপরাহ্ণ, জুন ৯, ২০২৫

যাদুকাটা সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করার দাবিতে মানববন্ধন

তাহিরপুর সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :  সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের যাদুকাটা নদীর উপর নির্মিতব্য সেতুর নির্মাণ কাজ পুনরায় চালু করা এবং অতি দ্রুত সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার দাবিতে সেতু সংলগ্ন এলাকায় মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।

সোমবার সকাল এগারোটায় সেতুর পশ্চিম পাড়ে গড়কাটি গ্রামের পাশে অনুষ্ঠিত উক্ত মানববন্ধনে আশেপাশের ঘাগটিয়া, গড়কাটি, সুন্দর পাহাড়ি, জালর টেক, মানি গাঁও আদর্শ গ্রাম ও জামবাগ, বাদাঘাট, মোল্লা পাড়া ও কামড়াবন্দ গ্রামের কয়েকশো মানুষ যোগ দেন।

স্থানীয় ঘাগটিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পবিত্র কুমার রায় এর সভাপতিত্বে উক্ত মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, যাদুকাটা সেতু আমাদের স্বপ্নের সেতু। এই এলাকার মানুষ এটাকে পদ্মা সেতুর মতোই মনে করেন। সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে কম খরচে কম সময়ে এলাকার লাখ লাখ মানুষ যাতায়াত করতে পারতেন। সুবিধা পেতেন পর্যটকরাও। আজ থেকে সাত বছর আগে এই সেতুটি উদ্বোধন হয়েছিল। কথা ছিল আড়াই বছরে সেতুর কাজ শেষ হবে কিন্তু সাত বছরেও সেতুর কাজ শেষ হয়নি। গত এক বছর যাবৎ সেতুর কাজ বন্ধ রয়েছে। আমরা অতি দ্রুত সেতুটির নির্মাণ কাজ পুনরায় শুরু করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেতুটির কাজ শেষ করার দাবি জানাই। তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের যাদুকাটা নদীর ওপর ১২ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে এই সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ৭৫০ মিটার দীর্ঘ এই সেতুটি শাহ আরেফিন (র.) ও অদ্বৈত মহাপ্রভু মৈত্রী সেতু নামে নামকরণ করা হয়। মানববন্ধনের শুরুতে বক্তব্য পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা।

কাসমির রেজা বলেন, এই সেতু সুনামগঞ্জের সীমান্ত সড়ক প্রকল্পের অংশ। তাহিরপুর, মধ্যনগর, ধর্মপাশা ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মানুষের যাতায়াতের সুবিধা, পর্যটকদের যাতায়াত ও ব্যবসা- বাণিজ্যের প্রসারের লক্ষ্যে যাদুকাটা নদীর ওপর সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এ সীমান্ত সড়ক ধরে পার্শ্ববর্তী উপজেলা মধ্যনগর হয়ে নেত্রকোনা জেলা সদরের সঙ্গে তথা ঢাকার সাথে যোগাযোগে স্থাপন হবে। ইতোমধ্যে মধ্যনগর এর মহিষখলা পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। ঢাকা থেকে সরাসরি গাড়ি নিয়ে মহিষখলা আসা যাচ্ছে। যাদুকাটার পাড় থেকে মহিষখলা পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ নির্মিত হলেই সীমান্ত সড়কের সংযোগ স্থাপন হবে। এখানে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে; তাই এই সেতুর কাজ না হওয়া মানে এই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়া। তাই এই সেতু বাস্তবায়ন না হলে হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের সুফল ও পাবে না লাখো মানুষ।

সভাপতির বক্তব্যে পবিত্র কুমার রায় বলেন, এই রাস্তা দিয়ে তাহিরপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের হাজার হাজার লোকজন যাতায়াত করে থাকেন। বাড়িকের টিলা, শিমুল বাগান ,নীলাদ্রি লেক ও টাঙ্গুয়ার হাওরে যাতায়াতকারী লাখ লাখ পর্যটকরাও রাস্তাটি ব্যবহার করেন। এই সেতুটি আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরী। আমরা আজকে মানববন্ধন করলাম। আমরা প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিবো। দ্রুত সেতুর কাজ শেষ না হলে আমরা আরও বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিবো।

সভায় বক্তব্য রাখেন লেখক ও সমাজকর্মী আবুল হোসেন, পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা, গণকল্যান ফাউন্ডেশন তাহিরপুরের সভাপতি সারোয়ার হাসান, তাহিরপুর ছাত্রকল্যাণ পরিষদের এমসি কলেজ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুর উদ্দিন, ঘাগটিয়া গণগ্রন্থাগারের আহ্বায়ক অমিও হাসান, প্রবোধ চন্দ্র রায়, সমাজকর্মী মাওলানা দেলোয়ার, কেন্দ্রীয় সদস্য, জাতীয় শিক্ষক ফোরাম এর সালমান আহমেদ সুজন, চিকিৎসাসেবা ফাউন্ডেশনের সদস্য নাজমুল ইসলাম, সমাজকর্মী গোলাম শহীদ, মানবজমিন সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি এমএ রাজ্জাক, জনকণ্ঠ তাহিরপুর প্রতিনিধি আবির হাসান-মানিক, শিক্ষক পল্টু রায়, মুফতি নেছার আহমেদ, সুন্দর পাহাড়ি গ্রামের পক্ষে নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

সরেজমিনে দেখা যায়, ৭৫০ মিটার দৈর্ঘ্য সেতুর জন্য ৮৫ কোটি ৯৯ লাখ ৩০ হাজার ৬৭৮ টাকা ব্যয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কন্সট্রাকশনের সঙ্গে চুক্তি হয়। ৪ দফা সময় বাড়িয়ে এ পর্যন্ত কাজ করা হয়েছে ৭৫ শতাংশ। তারা বিল নিয়েছে ৭৮ ভাগেরও বেশি। তারা ইতোমধ্যে ৬৪ কোটি ৯৯ লাখ ৬৯ হাজার টাকা বিল উত্তোলন করেছে। কাজের চেয়ে ১ কোটি টাকা বেশি বিল নিলেও সেতুর নির্মাণ কাজ এখনো থমকে আছে।

গত এক বছর আগে সেতুর সবক’টি পিলারের কাজ শেষ হয়েছে। স্পেন ১৫ টির মধ্যে ১২টি হয়েছে। ৭৫টি গার্ডারের মধ্যে ৬০ টির কাজ শেষ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২০টি গার্ডার ও ৩টি স্পেন নির্মাণের কাজ বাকি রয়েছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ