হাওরের বুকে সবুজ বিপ্লব; চাকরি না খুঁজে কৃষিতেই ভবিষ্যৎ গড়েছেন- আরিফ বাদশা

প্রকাশিত: ৪:১৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১, ২০২৫

হাওরের বুকে সবুজ বিপ্লব;  চাকরি না খুঁজে কৃষিতেই ভবিষ্যৎ গড়েছেন- আরিফ বাদশা

আব্দুস সামাদ আফিন্দী, বিশেষ প্রতিনিধি ::
চাকরির পেছনে না ছুটে কৃষিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে নজির গড়েছেন সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা গ্রামের যুবক আরিফ বাদশা। মাত্র ২৭ বছর বয়সে তিনি হয়ে উঠেছেন একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা ও প্রশিক্ষক। হাওরাঞ্চলের কৃষিকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলেছেন ডেইরি খামার, ফসল চাষ ও হাঁস পালনভিত্তিক একটি সফল এগ্রো প্রজেক্ট। তার এই উদ্যোগ শুধু নিজেকে নয়, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে অন্যদের জন্যও।

করোনা মহামারির সময়ে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত অবস্থায় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অধীনে সুনামগঞ্জ যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে তিন মাসের কৃষি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন আরিফ। সেই প্রশিক্ষণ থেকেই তার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার যাত্রা শুরু।
২০২২ সালে মাত্র দুটি গরু নিয়ে শুরু করেন ‘গোয়াল ডেইরি ফার্ম’। বর্তমানে তার খামারে গরুর সংখ্যা ১৬টি। প্রতিবছর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ৫-১০টি ষাঁড় মোটাতাজা করে বিক্রি করেন তিনি।

গরু পালনের পাশাপাশি রয়েছে তার বিস্তীর্ণ কৃষি জমি। ধান ছাড়াও তিনি চাষ করছেন ভুট্টা, সূর্যমুখী, সরিষা, বাদাম ও বিভিন্ন শাকসবজি। এসব উৎপাদিত ফসল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান করছে তাকে এবং তার অঞ্চলের বাজার ব্যবস্থাকেও করছে সমৃদ্ধ।

আরিফের এগ্রো প্রজেক্টে এখন ৩-৪ জন স্থানীয় শ্রমিক কাজ করছেন নিয়মিত ভিত্তিতে। হাওরের প্রাকৃতিক উন্মুক্ত চর ভূমিতে তিনি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে গরু ও হাঁস পালন করছেন। বছরে এখান থেকেও আসে উল্লেখযোগ্য আয়। বাড়িতে নিজ উদ্যোগে নির্মাণ করেছেন বায়োগ্যাস প্লান্ট—যার মাধ্যমে উৎপাদিত জ্বালানি ব্যবহার হচ্ছে রান্নার কাজে এবং উৎপন্ন হচ্ছে জৈব সার।

এখানেই থেমে থাকেননি আরিফ। গত এক বছরে তিনি জামালগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৪০০ তরুণ-তরুণীকে কৃষি ও খামার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। দিচ্ছেন মাঠপর্যায়ে পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা। তার লক্ষ্য—নিজের পাশাপাশি হাওরের আরও অনেক তরুণকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা।

উদ্যোক্তা আরিফ বাদশা বলেন, “আমাদের পরিবার কৃষির সঙ্গে যুক্ত। আমি মনে করি, দেশের শিক্ষিত তরুণদের শুধু চাকরির জন্য অপেক্ষা না করে উদ্যোক্তা হওয়া উচিত। এতে নিজের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিও উপকৃত হবে।”

জামালগঞ্জ উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা রণধীর দেবনাথ বলেন, “আরিফ বাদশা একজন অনুকরণীয় যুব উদ্যোক্তা। তিনি নিজের উদ্যোগে শুধু সফল হননি, পাশাপাশি অনেক তরুণের জন্য হয়েছেন অনুপ্রেরণা। তার এই উদ্যোগ আরও বিস্তৃত হোক—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ