শীতকালীন সবজি চাষে লোকসান গুনছেন চাষীরা

প্রকাশিত: ২:২৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৮, ২০২২

শীতকালীন সবজি চাষে লোকসান  গুনছেন চাষীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক :: শীতকালীন সবজি চাষে লোকসান গুনছেন চাষীরা। মৌসুমি সবজি শোভা পাচ্ছে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় মাঠে মাঠে। সেই হিসেবে বাজারেও সবজির সরবরাহ বেড়েছে। ক্রেতারা নাগালের মধ্যেই পাচ্ছেন শীতকালীন শাক-সবজি। কিন্তু ক্ষেতে হাহাকার করছেন প্রান্তিক কৃষকরা। তারা বলছেন, লোকসান গুনতে হচ্ছে সবজি চাষে।

সুনামগঞ্জের অন্যতম সবজি বাজার হচ্ছে জেল রোড এলাকায় সুরমা নদীর তীর ঘেঁষা গুদারা ঘাট। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে এবং আশপাশের ক্ষেত থেকে প্রতিদিন টাটকা সবজি আসে এই বাজারে।

বুধবার (২৮ জানুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়। অথচ প্রতি পিস এক কেজি ফুলকপি বা বাধা কপির দাম কৃষক পাচ্ছেন মাত্র দুই থেকে তিন টাকা। কৃষকের লাভের অংশ চলে যাচ্ছে বিক্রেতা কিংবা মধ্যস্বত্ব ভোগীদের পকেটে। বাজারে অন্যান্য সবজির দামও কম।

সবজি বাজারে প্রতি কেজি টমেটো ৩০ টাকা, শিম ১০ থেকে ১৫ টাকা, বেগুন ৩০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, করলা ৪০ টাকা, মটরশুঁটি ৪০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, আলু ২০ টাকা, কাঁচামরিচ ৬০ টাকা এবং মুলা ২/৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাগমারা এলাকার পাইকারি সবজি বিক্রেতা মতি মিয়া জানান,চাষীদের কাছ থেকে চার কেয়ার
( ফুলকপির ক্ষেত) কেনেন। তিনি বলেন, চার কেয়ার ফুলকপি ক্ষেতে প্রায় বিশ হাজার গাছ ছিল।প্রতিটি ছারা গাছ পঁচিশ টাকা দরে কিনেছিলেন। বাজারে প্রচুর পরিমাণে সবজি উঠে।কিন্তু ক্রেতা কম । ফলে তিনি তিন/ চার/ পাঁচ টাকা দরে বিক্রি করে দেন। তিনি আরও বলেন, সবজির আমদানির ওপর দাম ওঠানামা করে। এখন বাজারে প্রচুর সবজি, তাই দামও কম।এইজন্য লোকসানে সব বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে আমার তিন লক্ষ টাকা লোকসান হয়েছে।

যদিও ক্ষেতে এই সবজির সিংহভাগ দাম পাচ্ছেন না চাষি। সুনামগঞ্জের আশপাশের বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে।

জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কৃষক মুক্তার হোসেন । সকালে তীব্র শীত উপেক্ষা করে লাউ,মুলা,ডুগি সহ ধনিয়া পাতা নিয়ে সবজি বাজারে এসেছেন। তিনি জানান, এবার দুই কানি ( কেয়ার) জমিতে মূলা লাউ সহ অন্যান্য সবজি চাষ করেছেন। খুব ভালো সবজি হয়েছে। কিন্তু দাম পাচ্ছেন না । তিনি আরও জানান, বাজারে এসে দেখি দাম কম।সবজি চাষে যে টাকা খরচ হয়েছে , বিক্রি করে সেই খরচ তুলতে পারবেন না, লোকসান গুনতে হবে বলে জানান তিনি।
শহরের হাসন নগর এলাকার সবজি বিক্রেতা জসিম উদ্দিন জানান,ব্যবসায় লোকসান হচ্ছে। সবজি সস্তায় কিনেও বিক্রি করতে পারছেন না, ক্রেতা নেই বলে জানান তিনি।
শহরের ওয়েজখালি এলাকার সবজি বিক্রেতা আলী আহমেদ জানান, তার পরিচিত একজন কৃষক মূলা নিয়ে বাজারে এসে বিক্রি করতে না পেরে ওই মূলা ফেলে চলে গেছেন।তিনি জানান,সবজি কম দামে কিনলেও বাজারে ক্রেতা না থাকায় বিক্রি হচ্ছে না। এতে করে লোকসান গুনছেন চাষীরা এবং ব্যবসায়ীরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, এ বছর সুনামগঞ্জ জেলায় সবজি চাষে লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১২ হাজার হেক্টর। আমাদের লক্ষমাত্রা অর্জন হয়েছে ১২ হাজার ৫ শ ২০ হেক্টর।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে চাষীরা বাজারে সবজি বিক্রি শুরু করেছেন।আমরা তাদেরকে পরামর্শ দিচ্ছি, যে সমস্ত বাজারে সবজির চাহিদা বেশি ,সেই সমস্ত বাজারে সবজি নিয়ে বিক্রি করতে।যাতে করে তারা ন্যায্য মূল্য পেতে পারে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ