প্রকাশিত: ৭:১৫ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২০, ২০২২
মোঃ মোশফিকুর রহমান স্বপন: সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের কাজীরগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় পরিত্যক্ত ঘোষণার পর নতুন ভবন নির্মাণ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। পরিত্যক্ত ভবনের সাথেই টিনের এক চালার মধ্যে চলছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান। এতে আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হচ্ছে অভিভাবক ও শিক্ষকদের। বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই নতুন ভবন বরাদ্দ পাওয়া যাবে বলে জানালেন সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এস এম আব্দুর রহমান।
সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের অজপাড়া গায়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার কথা চিন্তা করে এলাকার বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী মৃত আব্দুস ছাত্তার ১৯৮৪ সালে বিদ্যালয়ের নামে ১০ শতাংশ জমি দান করেন। আর এই জমির উপরই নির্মাণ করা হয় নিম্নাঞ্চলের শিক্ষার বাতিঘর খ্যাত এই বিদ্যাপীঠটি। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ করা হয়। ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছরে সরকারি অর্থায়ণে ৪ কক্ষ বিশিষ্ট একটি একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। বিদ্যালয় ভবনটি নির্মাণের প্রায় দুই যুগ পার হতে না হতেই ভবনের ভিম, ছাদ ও দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেয় এবং ছাদের পলিস্তরাসহ বড় বড় আস্তর খসে পড়তে থাকে। কোমলমতি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের দুর্ঘটনার কথা চিন্তা করে ইতোমধ্যে কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয় ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। বিকল্প জায়গায় একছালা ভবন নির্মাণ করে সেই ভবনে গাদাগাদি ক্লাস চলছে এবং ঝুকিপূর্ণ ভবনের মধ্যেই কয়েকশ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষকবৃন্দ ক্লাস চালিয়ে যান।বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের মৌখিক ও লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিত ধর্মপাশা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাবৃন্দ সরেজমিন বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে শিক্ষার্থীদের নিয়ে অন্যত্র ক্লাস করার নির্দেশ দেন।পরবর্তীতে সরকারি অনুদানে জরাজীর্ণ স্কুল ভবনের সাথেই টিনের দুইটি একচালার মধ্যে পাঠদান অব্যাহত রয়েছে। সামান্য বৃষ্টি শুরু হলেই শিক্ষার্থীরা জরাজীর্ণ স্কুল ভবনের মধ্যে আশ্রয় নিয়ে থাকে। স্কুলের ওয়াশরুমের দরজা – জানালা ভেঙে গেছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অন্যর্থ গিয়ে প্রশ্রাব পায়খানা করেন। এতে ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক ও শিক্ষকবৃন্দকে চরম আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। বিদ্যালয় ভবনটি নির্মাণে বিলম্ব হওয়ায় একদিকে যেমন পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে,অন্যদিকে খেলার মাঠ না থাকায় শিক্ষার্থীরা খেলা ধূলা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। এদিকে জরাজীর্ণ বিদ্যালয় ভবনের ৩টি শ্রেণি কক্ষে কোন ক্লাশ না হলেও শিক্ষকরা পরিত্যক্ত ভবনের কক্ষে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসছে এবং বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় খাতা পত্র রাখছেন। শিশুদের যানমালের ক্ষয়ক্ষতির কথা চিন্তা-ভাবনা করে এলাকার অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের এ বিদ্যালয়ে পাঠাতে অনিহা প্রকাশ করছে বলেও একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
ভাঙ্গাচূড়া ভবনের পাশে ক্লাস করতে ভয় করে বলে জানায় বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মোঃ শাহজাহান, শিক্ষার্থী মোছাঃ সুনিয়া বেগম সহ অনেক শিক্ষার্থী।তারা বলেন,সরকার আমাদের একটি নতুন ভবন ও খেলার মাঠ করে দিলে আমাদের লেখা পড়া এবং খেলাধূলা করায় ভালো হতো। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমান জানান,বিদ্যালয়টি ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় অনেক কষ্ট করে পাঠদান চালিয়ে আসছি।বর্তমানে জরাজীর্ণ ভবনের সাথেই টিনের দুইটি একচালার মধ্যে শিক্ষার্থীদের ক্লাস চলছে।বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট একাধিকবার জানানো হয়েছে।কর্তৃপক্ষ আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান উন্নয়নে দ্রুত বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ ও খেলার মাঠ তৈরি করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সিদ্দিক মিয়া জানান,বিদ্যালয় ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। নতুন ভবন নির্মিত না হওয়ায় ছাত্র/ছাত্রীদের লেখাপড়ায় সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান। সুখাইড়- রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড মেম্বার সৈয়দ হোসেন বলেন, আমার গ্রামের একমাত্র বিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরে জরাজির্ণ অবস্হায় আছে।শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে পারছেনা।কিছুদিন আগে সরকারী ভাবে দুই লক্ষ টাকা পাওয়ার পর পরিত্যক্ত ভবনের পাশে টিনসেড ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।সেখানে গাদাগাদি করে ছাত্ররা ক্লাস করছে।
এতে পড়াশোনা করতে খুব সমস্যা হচ্ছে। আমি আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি ,আমার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসরিন সুলতানা দিপা আপা,এমপি মহোদয় এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের এই স্কুলের ভবনটি নতুন করে নির্মাণের মাধ্যমে , শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করে দিবেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এস এম আব্দুর রহমান জানান,বিদ্যালয় ভবনটি ঝুকিপূর্ণ এবং ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় পরিত্যক্ত ঘোষনা করা হয়েছে। শিক্ষকবৃন্দ ঝুকিপূর্ণ বিদ্যালয় ভবনের বাইরে টিনের দুইটি একচালার মধ্যে শিক্ষার্থীদের ক্লাশ চালিয়ে নিচ্ছেন। নতুন ভবন বরাদ্দ পাওয়ার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই নতুন ভবনের বরাদ্দ পাওয়া যাবে এবং পুরাতন ভবনটি অপসারণ করে নতুন ভবন নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করা যাবে। দ্রুত স্কুল ভবনটি নির্মাণ করে এই এলাকার কয়েক’শ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার দাবী এলাকাবাসী।
সম্পাদক ও প্রকাশক – জাকিয়া সুলতানা
ঠিকানা – সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল পয়েন্ট, সুরভী ১২/২ হাছন নগর সুনামগঞ্জ।
মোবাইল নাম্বার ০১৩১০৮৬৮৩১৩
email- noorerfouara94@gmail.com
Design and developed by Web Nest