হাওর পাড়ে জন্ম আমার – মুহাম্মদ আফজাল হোসেন

প্রকাশিত: ১২:৪৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪

হাওর পাড়ে জন্ম আমার –  মুহাম্মদ আফজাল হোসেন

হাওর পাড়ে জন্ম আমার
মুহাম্মদ আফজাল হোসেন

ভোর প্রভাতে কাঁধে লাঙ্গল মই
জমিনে দিয়েছি কত ঘাম শ্রম সময়
কত অচেনা কর্মের সঙ্গে হয়েছে দেখা
সুখের খোঁজে কাদামাটি মেখেছি গায়ে।

পৌষ মাসে শীতে ঠান্ডা জলে শীত শীত করে
মই দিতে দিতে অজস্র ঘাম ঝড়ে
আটা রুটি আলুভাজি কাদামাটিতে বসে
কত সকালের ক্ষিধে মিটেছে কামড়ে কামড়ে।

মাঘ মাসে কুয়াশা ঢাকা জমিনে পানি সেচতে
কতবার যে হেমইট কাঁধে নিয়ে পথ হারিয়ে
আগাছা পরিষ্কার করতে যেতে হয়েছে জমিনে
তবুও মুই হাল ছাড়িনি পরিশ্রম করেছি জমিনে।

ফাল্গুনে জুই চামেলি শিমুল ফোটে
ধানের পাতা উজ্জ্বল সবুজ
সূর্যের আভা আলোয় শিশির কণা বিন্দু
রাখাল সেজে গরু নিয়ে মাঠে চড়ে।

চৈত্র মাসে পানি শুকিয়ে খাল বিল চৌচির
জননীর কদরে থলে হাতে জমির মাঝে
থলে ভরে কৈ শিং চেং মাছ
সাদা স্বর্ণ চিংড়ি মাছের ভোজা।

চৈত্র মাসে বৃষ্টি ফোঁটা আশায় কতবার মোনাজাত
পাকনা হাওরে খোলা আকাশের নিচে
হক্কল একত্রিত হয়ে উল্টো হাতে চোখের জল
ফেলে ফেলে ফসল রক্ষা দোয়া।

বৈশাখে সবার মুখে হাসিখুশি
বৃষ্টি হলেই ধানে আসে গেরা
কৃষক কৃষাণীর বৃষ্টি জল চোখের জল এককার
সিদ্ধ দিয়ে গেরা ধান জাতে তুলে।

কালবৈশাখী ঝড়ে কৃষক কাঁচি রেখে মাঠে দৌড়
নারী পুরুষ শিশু বৃদ্ধ মাঠের মাঝে ঝাপ
কালোমেঘ আসছে বেগে খলাভরা ধান লারা
তাড়াহুড়া করে নতুন বউ মাঠে আসে।

কয়লা পুড়া রোদে ছোঁয়ায় কৃষকের মনে হাসি
একটু কালো করলে আকাশ কৃষাণী উনুন রেখে
অবুঝ শিশু কোলে নিয়ে মাঠে আসে দৌড়ে
তাঁবুর নিচে শিশু রেখে নতুন বধু কাজে।

নতুন বউয়ের মাঠে আসে
মিষ্টি খাওয়ার ধুম
বাতাস এলে চুচা জেরে
জাতপাত ধান হয় তিনজাত।

জৈষ্ঠ্যমাসে ডেমি ধানের ধুম
কখন কখন বৈশাখে নতুন পানির গমন
নতুন জলে জেলে হাসে খুশি লাগে মনে
হাওর পাড়ের মানুষজন হাট বাজার ভিড়।

বাঁশ বস্তা ইট পাথর কিনতে গিয়ে নতুন ধান বেঁচে
বাড়ি ভিটে রক্ষা করতে চালিয়া আনতে দূরে
বাড়ির মাটি বস্তায় ভরে চারিপাশে বেড়
বাঁশ দিয়ে ইর বাঁধে রশি দিয়ে টানাটানি।

আষাঢ় শ্রাবণে মুষলধারে বৃষ্টি
টিনের ঘরে জল পড়ে ছন যায় পচে
অবুঝ শিশু মেঘে ভিজে মরল চাচা হাসে
বজ্রপাতে আওয়াজ শুনে সখিনা বিবি কাঁদে।

বৃষ্টিতে বন্ধি জীবন
দাদাভাই ষোলগুটি ভাই ভাবী লুডু খেলে
বাচ্চারা রাম সাম মধু যদু
চায়ের দোকানে চলে ফাটাফাটি মুভি।

ভাদ্র মাসে হাওর বুকে বাওড়ের তুল পার
জীবন বাজি রেখে ঢেউয়ের সাথে যুদ্ধ করে জেলে
নাকানিচুবানি খেয়ে শীতল হয়ে বাড়ি ফেরা
মায়ের আদর সোহাগে ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।

হাওর পাড়ের জন্ম আমার
হাওর নদীর ঢেউয়ের সাথে আছে মনের মিল
দিবারাত্রি হাওর বুকে রাত্রীযাপন
মন খুলে মুক্ত আকাশে ইচ্ছে মতো প্রেম।

পাকনার হাওরে পাতাম ডিঙি নাও
বাদাম তুলে নৌকা দিয়ে হাওর বুকে গান
দেশ বিদেশের কত মানুষ নৌকা ভোজাই করে
দেখতে আসে হিজল করচ নলচুন্নী বাগ।

হাওড় পাড়ে জন্ম আমার
হাওরের পাড়েই বাস
মনের সুখে কলম ধরি
লিখতে জানি হাওর মাটির গান।

হাওর পাড়ের যুগে যুগে জন্মায়
জ্ঞানী গুণী বুদ্ধিজীবী
হাওরের পাড়ে বহু দামাল ছেলে
দেশের তরে জীবন দিল মুক্তিযুদ্ধ।

হাওর বুকে বহু হাওর
শনি হালিয়া মাটিয়ান পাকনা
সোনার ফসল বাম্পার ফলন
দেশের মানুষের তরে হাসি।

হাওর পাড়ে জন্মে যে জন
জীবন যুদ্ধে জয়ী সে জন
ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করে
কাঁধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সুখের গান গায়।

জন্ম আমার হাওর পাড়ের জামালগঞ্জে
ভীমখালী ইউনিয়ন ফেকুল মাহমুদ পুরে
ঢেউয়ের সাথে যুদ্ধ করে বাপের সাথে
ভিটেমাটি রক্ষা করতে খেয়েছি কত হাওরের জল।

সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলা হাওরের দ্বীপ
বর্ষাকালে নৌকা ছাড়া নেই কোনো যোগাযোগ
দিরাই শাল্লা ধর্মপাশা জামালগঞ্জ
হাওর জলে ভেসে যায়।

বন্যাকালে গ্রামে ভাসে জলে
হঠাৎ করে ঝড় তুফান ঘূর্ণিঝড়
ডাকাত ভিড় ঘাটে
হাওর পাড়ে যার ডাকাত ভয়ে ঘুম নাই তার।

হাওর জলে শাপলা ভাসে
জমিতে ফসল খাল বিলে মাছের সারি
দুলতায় নদী ঘেঁষে প্রিয় মাতৃভূমি
হাওর পাড়ের মসজিদে আমার নাড়ী গাথা।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ