প্রকাশিত: ৪:৪৩ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৫, ২০২৪
তাহিরপুর সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে একটি বিদ্যালয়ে প্রাক প্রাথমিকে ক্লাস নেয়ার সময়ে শিক্ষিকার পোশাক, গেটআপ রুচিসম্মত না হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ফেসবুক লাইভে’ তাকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেছেন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুজ্জামান শেখ।
তার মন্তব্য নিয়ে উপজেলা জুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।
গত মঙ্গলবার দুপুরে তাহিরপুর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কর্মকর্তা একটি বিদ্যালয়ে পরিদর্শন করতে গিয়ে সহকারী এক শিক্ষিকার পোশাক ও গেটআপ দেখে হতাশ হন। তারপর নিজেই ভয়েস দিয়ে শিক্ষিকার ক্লাস নেয়ার দৃশ্য ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে লাইভ করে ছড়িয়ে দেন। মুহূর্তেই ভিডিও লাইভটি ছড়িয়ে পড়ে।
১১ মিনিটের ভিডিও লাইভে দেখা যায়, তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের পুরান লাউড়ের গড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক প্রাথমিকের ক্লাস চলাকালীন সময় তিনি বলছেন ‘আমি হতাশ হইলাম প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষকের এই গেটাপ দেখে, সারা দেশে ১০ম গ্রেডের শিক্ষকদের আন্দোলন চলছে, আমি আন্দোলনের পক্ষে। কিন্তু এই শিক্ষিকার এ গেটাপ কেনো, কীভাবে তা ধারণ করবে, ১০ম গ্রেড তো দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা, তাকে তো গেটাপে, রুচিতে, ভাবে ভঙ্গিতে, পোশাকে এগিয়ে আসতে হবে। আপা আপনি আরও একটু পরিমার্জিত পোশাক পড়বেন সহ নানা কুরুচিপূর্ণ কথা।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) বিলকিস বেগম বলেন, স্যারকে আমি বলেছি, উনি প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষক নন। প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষক ছুটিতে আছেন। তারপরও তিনি অশালীন কথাবার্তা সংযোজন করে নিজের ভয়েস দিয়ে ফেসবুক লাইভ করেন। যা অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। আমার সহকারী শিক্ষিকা এরপর থেকে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
মধ্য তাহিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, একজন শিক্ষকের গেটআপ ঠিক নাই বলে কি আমরা ১০ম গ্রেড দাবি করতে পারি না। ১০ম গ্রেডের সঙ্গে গেটআপের কি সম্পর্ক, রুচির কি সম্পর্ক তা আমার বোধগম্য নয়। এ ছাড়া তিনি রাস্তাঘাটে শিক্ষকদের হঠাৎ দাঁড় করিয়ে বিভিন্ন লজ্জাজনক কথা বলেন।
বালিজুরী নয়াহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুর রহমান বলেন, শিক্ষক বা শিক্ষিকাদের ভুল থাকলে সংশোধন করার নির্দেশ বা আদেশ শিক্ষা কর্মকর্তা দিতে পারেন, তা মৌখিক কিংবা অফিসিয়াল হতে পারে। কিন্তু ভিডিও করে উনার ব্যক্তিগত আইডি থেকে ফেসবুকে পোস্ট দেয়া হেয় প্রতিপ্রন্ন ছাড়া কিছু না।
বিশিষ্ট সমাজ সেবক মেহেদী হাসান উজ্জ্বল বলেন একজন নারী শিক্ষক কে নিয়ে এভাবে ফেসবুক লাইভে এসে একজন কর্মকর্তা কুরুচিপূর্ণ কথা বলবে ভাবতে অবাক লাগে। আমরা সকলেই লাইভ প্রোগ্রামটি দেখেছি। আমরা এই শিক্ষা কর্মকর্তার দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি কামনা করছি।
তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জুনাব আলী বলেন, একজন শিক্ষক কে তার পোশাক নিয়ে উর্ধতন কর্মকর্তা এমন কূরুচিপুর্ন ভাষায় কথা বলবে এটা আমরা কখনো আশা করিনি।আমরা শিক্ষা কর্মকর্তার আচরনে হতাশ হলাম। আশা করবো উর্ধতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত পুর্বক এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহন করবেন।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুজ্জামন শেখের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল আওয়াল বলেন, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুজ্জামন শেখ আমার কাছে এসে ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার জন্য শিক্ষিকা ও তার অভিভাবকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। গতকাল শিক্ষকদের সমন্বয় সভায় উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু তিনি সভায় আসেননি। শিক্ষিকা বা শিক্ষকের কোনো অনিয়ম দেখে থাকলে তা লাইভ না করে পরিদর্শন খাতা বা শিক্ষকদের নিয়ে আলোচনা সভা করে বিষয়টি বলতে পারতেন। ফেসবুকে তার লাইভ করা একদম ঠিক হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবুল হাসেম বলেন, ফেসবুক লাইভটি আমিও দেখেছি। স্কুল পরিদর্শন করতে গিয়ে শিক্ষিকার অনুমতি না নিয়ে লাইভ করা ঠিক হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক – জাকিয়া সুলতানা
ঠিকানা – সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল পয়েন্ট, সুরভী ১২/২ হাছন নগর সুনামগঞ্জ।
মোবাইল নাম্বার ০১৩১০৮৬৮৩১৩
email- noorerfouara94@gmail.com
Design and developed by Web Nest