যাদুকাটা,ধোপাজান নদী সুরক্ষা ও সংরক্ষণে পাথর-বালু খেকো সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম বন্ধে সংবাদ সম্মেলন

প্রকাশিত: ১:২৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪

যাদুকাটা,ধোপাজান নদী সুরক্ষা ও সংরক্ষণে পাথর-বালু খেকো সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম বন্ধে সংবাদ সম্মেলন

মোঃ মোশফিকুর রহমান স্বপন :

সুনামগঞ্জ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন জেলা কমিটির উদ্যোগে যাদুকাটা – ধোপাজান নদী সুরক্ষা ও সংরক্ষণে বেপরোয়া পাথর- বালু খেকো সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম বন্ধে
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎ জ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্টিত হয়েছে।
শনিবার সকাল ১১ টায় এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্টিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সামনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুনামগঞ্জ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি এ কে এম আবু নাছার আহমদ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহ সভাপতি শওকত আলী,সহ সভাপতি সাইফুল আলম ছদরুল, সাধারণ সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক ফজলুল করিম সাঈদ,সহ সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম,নুরুল হাসান, আব্দুল গনি পাঠান প্রমূখ।
লিখিত বক্তব্যে পরিবেশ আন্দোলনের সভাপতি একেএম আবু নাছার আহমেদ বলেন,যাদুকাটা ধোপাজান নদী সুরক্ষা ও সংরক্ষনে বেপরোয়া পাথর- বালিখেকু সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধ পরিবেশ রক্ষায় অতিব জরুরি ।
সুনামগঞ্জ জেলার যাদুকাটা ও ধোপজান চলতি নদীতে উজান থেকে পাহাড়ী ঢলে নেমে আসা পাথর – বালি হাওরাঞ্চলের দারিদ্র বারকি শ্রমিকরা সনাতন পদ্ধতিতে হাতের সাহায্যে বালতি ও বেলচা দিয়ে উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করত। বিগত দিনে বারকি শ্রমিকরা মজুরিবৃদ্ধিসহ তাদেরকে ব্যবসায়ী কর্তৃক জুলুম- নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়েছে।
কিন্তু দু:খ ও পরিতাপের বিষয় হল বিগত ১৩/১৪ বৎসর যাবত স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফা লাভের আশায় ইজারাদাররা মহালগুলোতে ড্রেজার- বোমা মেশিন দিয়ে পাথর- বালি উত্তোলনের জন্য গড়ে তুলে পাথর – বালিখেকো সিন্ডিকেট। এক সময় মহাল গুলোতে পাথর – বালিতে পরিপূর্ণ ছিল, বারকি শ্রমিকরা হাতের সাহায্যে বালতি ও বেলচা দিয়ে যে পরিমান পাথর- বালি উত্তোলন করত প্রতি বছর পাহাড়ি ঢলে উজান থেকে পাথর বালি নেমে এসে ক্ষয় পূর্ণ হত। এতে বারকি শ্রমিকরা যেভাবে কাজের সুযোগ পেত পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষা হত। ইজারাদার ও ব্যবসায়ীদের বেপরোয়া মুনাফার লোভে ড্রেজার- বোমা ব্যবহারের ফলে পাথর বালিশূন্য হয়ে পড়ে যাদুকাটা ও ধোপাজান মহালের মূল জায়গাগুলো।
এতে পাথর – বালিখেকো সিন্ডিকেটের মুনাফার ক্ষুদা মেটেনি, শুরু হয় রাস্তাঘাট ঘরবাড়ি ফসলি জমি এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ ও নদীগর্ভে বিলিন করে চলে বেপরোয়া সিন্ডিকেটের লুন্ঠন। বেপরোয়া সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বারকি শ্রমিকরা তাদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে যেমন প্রতিবাদ করেছে তেমনি সচেতন সংবাদ কর্মীরাও চালিয়েছে কলম যুদ্ধ,বসে থাকেনি পরিবেশ কর্মীরাও।
সকলের আন্দোলনের ফলে মাঝে মধ্যে দায়সারা অভিযান পরিচালনা করে আটক করা হয়েছে লুন্ঠনকারীদের নিয়োগকৃত শ্রমিকদের, অধরা থেকে যায় পাথর – বালিখেকো সিন্ডিকেটের মূল হোতারা। লুটপাটের ফলে একদিকে মুষ্টিমেয় কিছু মাফিয়া চক্রের লোকজন শতকোটি টাকার মালিক হয়ে শহরে অট্টালিকা গড়েছে এবং করেছে বিলাস বহুল বাড়ি। সমাজে এদের কারও পরিচয় দানবির, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা। পক্ষান্তরে হাজার হাজার বারকি শ্রমিক পাথর – বালি মহাল থেকে উচ্ছেদ হয়ে ঢাকা নারায়নগঞ্জ,গাজীপুর চট্টগ্রামে অনিশ্চিত উদ্বাস্তু জীবনের সন্ধানে আর যাদুকাটা ও ধোপাজান মহালের প্রতিবেশ পরিবেশ আজ বিপন্ন।
উল্লেখ্য যে এই সকল অপকর্ম বন্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি ( বেলা) ২০০৯ সালে যাদুকাটা নদীতে ড্রেজার- বোমা বন্ধে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে একটি মামলা এবং ধোপাজান নদীতে ৭৪৩১/১৩ একটি রিট পিটিশন দায়ের করে। বাংলদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির মামলার প্রেক্ষিত মহামান্য আদালত উল্লেখিত দুটি নদীতে ড্রেজার- বোমা মেশিন বন্ধের নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু পাথর- বালিখেকোরা উচ্চ আদালতের নির্দেশ আমান্য করে উল্লিখিত নদী দুটিতে প্রসাশনে ঘাপটি মেরে থাকা অসাধু চক্রের সহায়তায় ড্রেজার- বোমার তান্ডব চালালে আমরা পরিবেশ কর্মীরা প্রশাসনের সকল দপ্তরে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৫/১০/২০১৫ ইং তারিখ পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক সরজমিন পরিদর্শন করে ধোপাজান বালি মহাল বিলুপ্তির সুপারিশ করেন।
সুনামগঞ্জ জেলা পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলার জেলা প্রশাসক জনাব সাবিরুল ইসলাম ২০/০৮/২০১৬ ইং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ইজারাদার ও পরিবেশ কর্মীদের এক সুনানীর আয়োজন করলে ধোপাজান বালি মিশ্রিত পাথর কোয়ারীতে প্রান প্রকৃতি বিনাশী ড্রেজার- বোমার তান্ডবের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ প্রেরন করেন। যার প্রেক্ষিতে ২০১৮ ইং সালে মহালটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। উল্লেখ্য যে ধোপাজান নদীর প্রস্থ২০১ মিটার আর বর্তমানে ড্রেজার বোমার তান্ডবে অর্ধমাইলের অধিক হবে প্রস্থ,যাদু কাটা নদীর প্রস্থ ৫৭ মিটার কিন্তু ঘাঘটিয়া হতে বিন্নাকুলির দিকে তাকালে সাগর সদৃশ কিছু মনে হয়। উভয় নদীর গভীরতা এখন কোথাও ১০০ ফুট কোথাও ১৫০ ফুট। আশ্চর্যের বিষয় ৫ আগষ্টের দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পাথর- বালিখেকো সিন্ডিকেট দানবীয়ভাবে শক্তিশালী হয়ে ড্রেজার- বোমা মেশিনসহ বিভিন্ন নামের খনন যন্ত্র ব্যবহার করে যেমন তুলছে বালি তেমনি থেমে নেই নদীর পারকাটা, যেন মহাল দুটি পাথর- বালিখেকোদের অভয়ারণ্যে পরিনত হয়েছে ।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন,
গত ২৯/৮/২৪ ইং এবং ১৯/৯/২৪ ইং তারিখে আমাদের সংগঠনের সভাপতি এবং সিনিয়র সহসভাপতি জেলা প্রশাসকের কক্ষে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত হয়ে জেলা প্রশাসকসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকল কর্মকর্তাবৃন্দের উপস্থিতিতে ইজারাবিহিন ধোপাজান এবং ইজারাকৃত যাদুকাটা নদীর বর্তমান অবস্থা তুলে ধরার পাশাপাশি অবৈধ বালি উত্তোলন ও পরিবহণ বন্ধ করার দাবি জানানো হয়। জেলা প্রশাসকসহ সকল কর্মকর্তাবৃন্দ অবৈধ বালি উত্তোলন ও পরিবহন ব্ন্ধ করার প্রয়োজনীয় ও কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করা হলেও বাস্তবে অদ্যাবধি লোক দেখানো ব্যবস্থা গ্রহন ব্যতিত অবৈধ বালি উত্তোলন বন্ধ করার কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহন আমাদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছেনা। ইজারাবিহীন ধোপাজান নদী ও সুরমা নদীর সংযোগস্থলে সার্বক্ষনিক জবাবদিহিমূলক প্রহরার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রনের অনুরোধ জানানো হয় কিন্তু বাস্তবে নামে মাত্র পুলিশ প্রহরার ব্যবস্থা করা হয়। পুলিশের সম্মুখ দিয়ে শত শত বালিবাহি নৌকা চলে গেলেও পুলিশের ভুমিকা থাকে স্বাক্ষী গোপালের মত। গত বৃহস্পতিবার ২৬/৯/২৪ ইং দিবাগত রাতে সুরমা ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামে মৃত চান্দু মিয়ার ছেলে বালিখেকু সিন্ডিকটের সদস্য আব্বাস মিয়ার মৃত্যু হয়েছে।আমাদের প্রশ্ন ইজারবিহি নদীতে বালিবাহি নৌকার ধাক্কায় কিভাবে একজনের মৃত্যু হয় ? প্রশাসনকে এর দায় নিতে হবে।

নদী দুটির লুটপাটের যে কাহিনী সংবাদ মাধ্যমে ছাপা হয়েছে সব সংবাদ জরো করলে বড় লাইব্রেরি সংবাদের স্তুপ হয়ে যাবে। এলকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের আহাজারি লিপিবদ্ধ করলে মহাকাব্য রচনা করা যাবে।
উভয় নদীতে চলমান পরিবেশ প্রতিবেশ তথা প্রাণ প্রকৃতি বিনাশী কর্মকাণ্ড অবিলম্বে বন্ধের জোর দাবি জানান তিনি। পাশাপাশি উভয় নদীতে গড়ে উঠা অসাধু সিন্ডিকেটের মূল হোতাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টাতমূলক শাস্তির দাবি জানানতিনি। একইসাথে এই উভয় নদীতে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের পাশাপাশি বিজিবির সদস্যদের টহলে সমপৃক্ত করণে জোর দাবি জানান তিনি । তিনি বলেন, শত শত কোটি টাকার সরকারি ও সর্বজনের সম্পদ লুন্ঠনকারীদের আইনের আওনতায় আনয়ন সাপেক্ষে ক্ষতিপূরণ আদায়ের দাবি জানাচ্ছি ।

মোঃ মোশফিকুর রহমান স্বপন
তাং-২৮/০৯/২৪

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ