প্রকাশিত: ৪:১৬ অপরাহ্ণ, জুন ২৩, ২০২৪
ভাটির কণ্ঠ ডেস্ক : বন্যা কবলিত জনসাধারণকে রক্ষায় পর্যাপ্ত ত্রাণ ও নগদ আর্থিক সহযোগিতা করার দাবিতে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালাল সরকারগুলোর ধারাবাহিক বেপরোয়া লুটপাটে সৃষ্ট বন্যা মোকাকেবলায় ঐক্যবদ্ধ হোন।
সিলেট বিভাগ তথা হাওরাঞ্চলে বার বার সৃষ্ট বন্যায় আক্রান্ত জনসাধারণকে রক্ষায় পর্যাপ্ত ত্রাণ ও নগদ আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের দাবি জানিয়েছে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের হাওরাঞ্চলের বন্যা সমস্যা সমাধান আন্দোলন পরিচালনা কমিটি। বন্যা সমস্যা সমাধান আন্দোলন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক রজত বিশ্বাস ও যুগ্ম-আহবায়ক রতœাঙ্কুর দাস জহর ২৩ জুন গণমাধ্যমে প্রেরিত এক যুক্ত বিবৃতিতে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা তথা হাওরাঞ্চলে বার বার সৃষ্ট বন্যায় জনগণের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হওয়ার তীব্র ক্ষোভ করে বলেন শত শত বছর ধরে হাওরাঞ্চলে বসবাসকারী জনসাধারণ বর্ষাকালে তাদের জীবনযাপনের উপযোগী বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা নিজেরাই গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। বর্ষাকালে পাানি প্রবাহ ঠিক রেখে তাদের জীবনজীবিকা ও যোগাযোগের প্রেক্ষিতে নৌকা কেন্দ্রিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলো হাওরবাসী। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদ ও দালাল ক্ষমতাসীন প্রতিক্রিয়াশীল সরকারগুলো বন্যা নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞান ও মানুষের উদ্ভাবনী শক্তিকে প্রয়োগ না করে সৃষ্ট বন্যাকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করে চলেছে। অতীতের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় ইংরেজ আমলে এক পর্যায়ে ফসলি খাজনার পরিবর্তে নগদ অর্থ খাজনায় নির্ধারণ করা হয়। ফলে ফসল ও সেচ ব্যবস্থায় প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন থাকলো না। তার অবসম্ভাবী পরিণতির হলো সংস্কারের অভাবে নদ-নদী গুলো পলি জমে ভরাট হলো; ফলে নদী-নালা, খাল-বিল গুলোর বর্ষার পানি বহন করে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। অন্য দিকে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষে তাদের শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবারাহ এবং শিল্পজাত দ্রব্যাদি নিজ দেশে প্রেরণ করার উদ্দেশ্যে পাহাড় কেটে, প্রকৃতি ধ্বংস করে এবং নদীর উপর ব্রীজ তৈরি করে গড়ে তোলে রেললাইন। বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ বাণিজ্যিক স্বার্থের কারণে নদী শাসনের বৈজ্ঞানিক নিয়মকে প্রয়োগ না করায় নদীগুলোর স্বাভাবিক গতি রুদ্ধ হয়ে যায়। তারই ধারাবাহিকতায় নয়াউপনিবেশিক আধাসামন্তবাদী বাংলাদেশে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের স্বার্থে অপরিকল্পিত ও অবৈজ্ঞানিকভাবে রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কার্লভাট, ঘরবাড়ী, ইটভাটা, ভূমিদস্যুদের রিয়েল স্টেট ব্যবসা, কলকারখানা, অর্থনৈতিক জোন, বিশেষ অর্থনৈতিক জোন, অর্থনৈতিক করিডোর নির্মাণে ফসলি জমিসহ নদ-নদী, খাল-বিল, প্রাণ-প্রকৃতি, পরিবেশ ধ্বংস করা হয়। অন্য দিকে ক্ষমতার স্বার্থে সাম্রাজ্যবাদের দালাল ভারত সরকার কর্তৃক আন্তর্জাতিক নদী আইন ও পানি প্রবাহের প্রাকৃতিক নিয়ম উপেক্ষা করে একতরকারভাবে ফারাক্কা বাঁধ, অভিন্ন ৫৪ টি নদীর উপর ড্যাম, গ্রোয়েন ইত্যাদি নির্মাণ করে শুকনো মৌসুমে পানি আটকে রেখে কৃত্রিম মরুময়তা এবং বর্ষা মৌসুমে পানি ছেড়ে দিয়ে অকাল বন্যা সৃষ্টি করা হচ্ছে। কিন্তু ৭১’ পরবর্তীতে ক্ষমতাসীন ভারত প্রেমী ও তথাকথিত ভারত বিরোধী কোন সরকারই এর বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালাল বিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে বিভ্রান্ত ও বিভক্ত করে চলেছে। সাম্রাজ্যবাদী একচোটিয়া পুঁজিপতিরা এবং তাদের দালালদের মুনাফার নিচে বলি দেওয়া হচ্ছে প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশকে। ফলে বেড়েই চেলেছে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন-মনোঅক্সসাইডসহ গ্রীন হাউজ গ্যাস নির্গমন বৃদ্ধি, বিশ^ উষ্ণায়ন বেড়ে চলা, ওজন স্তরের ধ্বংস হওয়া, প্রজাতির বিলুপ্তি, জীব-বৈচিত্রের ক্ষতিসাধন, তেজস্ত্রিয় দুষণ, উষ্ণমন্ডলীয় বনাঞ্চল বিনাশ, প্রান্তিক বনভুমি ধ্বংস, ভূমির নিচের জল নিঃশেষ করা ও দুষিত করা সমুদ্রতট ও তটবর্তী নদীনালার দুষণ, প্রবাল-প্রাচীরের ক্ষয়, বর্জ ও তৈল দুষণ, নির্বিচারে অতিরিক্ত মাছ ধরা, আবর্জনা নিয়ে জমি ভরাট করা, বর্জ, দুষণ, আগাছা ও পোকামাকড় বিনাশী বিষের যথেচ্ছ অপব্যবহার, গাছপালা বনজঙ্গল উজাড় করা, পাহাড় কাটা ইত্যাদির ফলে বৈশ্বিক প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ার ও আবহওয়ার পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলসহ বাংলাদেশে। ফলে ঘুর্ণিঝড়, সাইক্লোন, জলোচ্ছাস, উপকুলীয় অঞ্চল তলিয়ে যাওয়া, লবনাক্ততা বৃদ্ধি, নদনদীর নাব্যতা হ্রাস, অতিরিক্ত তাপ প্রবাহ, ঋতু বৈচিত্র হারিয়ে যাওয়া, মরুময়তা সৃষ্টি, নতুন এবং পুরাতন নানা রোগ বেলাই ইত্যাদি বাংলাদেশের কৃষি ও জনজীবনসহ সামগ্রীক অথনৈতিক সংকট বৃদ্ধি করছে। পুজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী অর্থনীতির বেপরোয়া লুন্ঠনের পরিণতি হচ্ছে প্রকৃতির প্রতিশোধ। নেতৃবৃন্ধু আরও বলেন ভাটি এলাকায় আজ আগাম বন্যা প্রায় নিয়মিত রূপ নিচ্ছে। তাকে যদি প্রতিক্রিয়াশীলদের মত বন্যা হিসাবে দেখি তাহলে আড়াল হবে বন্যার প্রকৃতি কারণ এবং এর জন্য যারা দায়ি তারা রক্ষা পাবে জনরোষ থেকে। আবার লুটেরারা বন্যার্তদের পাশে দাড়ানোর নামে বন্যা কেন্দ্রিক বরাদ্দকৃত ত্রাণ, নগদ অর্থ অধিকাংশ লুটপাট করে কিয়দংশ বিতরণের নামে নিজেদেরকে জনদরদি ও জনপ্রতিনিধি হিসাবে ক্ষমতায় থাকার এবং ক্ষমতায় যাওয়ার সিড়ি হিসাবে বন্যাকে কাজে লাগায়। আজ তাই প্রয়োজন বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজির স্বার্থরক্ষাকারী স্বৈরতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন করে শ্রমিক-কৃষক জনগণের জীবনের নিশ্চয়তাসহ প্রাণ-প্রকৃতি, পরিবেশকে উৎপাদন শক্তির বিকাশে পরিপূরক হিসাবে কাজে লাগানো। নেতৃবৃন্দ বন্যা দূর্গতদের পাশে সংগঠনের সকল নেতাকর্মীদের সাধ্য অনুযায়ী পাশে দাড়ানোর আহবান জানানোর পাশাপাশি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ লক্ষ লক্ষ মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির প্রেক্ষিতে পর্যাপ্ত ত্রাণ-প্রণোদনা প্রদানসহ বন্যা কবলিত মানুষের জানমাল রক্ষায় সরকারি উদ্যোগে আশ্রয়কেন্দ্র, চিকিৎসা ও নৌ-যোগাযোগের ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
বার্তাপ্রেরক
সাইফুল আলম সদরুল
সদস্য
হাওরাঞ্চলের বন্যা সমস্যা সমাধান আন্দোলন পরিচালনা কমিটি, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট
সম্পাদক ও প্রকাশক – জাকিয়া সুলতানা
ঠিকানা – সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল পয়েন্ট, সুরভী ১২/২ হাছন নগর সুনামগঞ্জ।
মোবাইল নাম্বার ০১৩১০৮৬৮৩১৩
email- noorerfouara94@gmail.com
Design and developed by Web Nest