বিসর্জন ; মোঃ এরশাদ মিয়া

প্রকাশিত: ৫:১৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৫, ২০২৪

বিসর্জন ;  মোঃ এরশাদ মিয়া

তার সাথে আমার কত-শত সখ্যতা। সেই সোনালি ছোট্ট কাল থেকেই পছন্দের তালিকায় শীর্ষে। তার সাথে আজ খুব কম দর্শন হয়। হয়তোবা মহান পেশায় নিয়োজিত আছি বলে। বড়ো বড়ো জনাব মহোদয়রা, কিংবা সরকার বাহাদুর চান না শিক্ষকরা একটু ভালো খেয়ে পড়ে বাঁচুক। অথচ শিক্ষকদের চেয়ে ও কম যোগ্যতা সম্পন্ন লোকেরা উচ্চতর গ্রেড পেয়ে কিংবা অশিক্ষিতরা বিভিন্ন অসদুপায় অবলম্বন করে সমাজের সর্বক্ষেত্রে থৈথৈ করে দাপটের সাথে বিচরণ। যাক ঐদিকে না যাই। যখন একটু আধটু বুঝতে শিখেছি একান্নবর্তীপরিবার মা রান্না করছেন তার পাশ ঘিরে বয়সের খুব কাছাকাছি ভাই বোন বসে গল্প করছি। গরম গরম পিঠাপুলি রান্না হচ্ছে। কড়াই থেকে নামছে কার আগে কে খাবে তাই নিয়ে কম্পিটিশন। উত্তপ্ত চুলোর কাছে বিন্দু বিন্দু জল বেয়ে পড়ছে মমতাময়ী মায়ের ললাট থেকে। সন্তানরা খাচ্ছে মায়ের তৃপ্ত মুখ খানি আজো স্পষ্ট মনে আছে। নেই কোন ক্লান্তির লেশমাত্র। ছোট্টবেলায় ডাইনিং বলতে পিড়ি টেনে সবাই একসাথে বসা। পরিবারের সবাই চারপাশে গোল হয়ে বসা। মা যেন সবার মধ্যমনি। গরম খাবার গুলো মা চামচ দিয়ে পরিবেশন করছেন। মাছের মুন্ডটা বাবার পাতে তুলে দিয়েছেন । কিন্তু বাবা কোন দিন সেই মুন্ডটা খাননি। কতো মমতায় সন্তানের পাতে তুলে দিতেন। রহস্যটা তখন বুঝিনি। যখন বাবা হলাম সুহাসিনী পাতে যখন মাছের মুন্ডটা তুলে দেয় তখন কেন যেন খেতে ইচ্ছে করে না। সন্তানের পাতে তুলে দিলেই যেন পরম প্রশান্তি। মাংসটুুকু সন্তানের পাতে তুলে দিয়ে একটু আলু কিংবা ঝুল দিয়ে কোন রকম খাবারটা শেষ করলেই হলো। সন্তানরা যখন কোন কিছু খায় বাবা মার আত্মা তৃপ্ত হয়। আমরা কয়জনে পারি মা বাবাকে খাওয়াইয়ে হৃদয় তৃপ্ত করতে? ন্যাচারালি নট আর্টিফিসিয়ালি। মনকে জিজ্ঞেস করুন? প্রশ্ন থেকেই যায়? সহধর্মীনী যখন জিজ্ঞেস করে তুমি মাছের মুন্ডটা খাও না কেন? তখন অনেক কিছুই মনে পড়ে । তাকে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলি দেখো যা হবার তা হয়ে গেছি । আর কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নেই । কিন্তু সন্তানদের মাঝে অপার সম্ভাবণা রয়েছে । বাবা যেভাবে স্বপ্ন দেখতো আমার সন্তানরা এই হবে সেই হবে। হয়তো সন্তানদের জিতিয়ে দেবার জন্য তাদের জীবনের অনেক শখ আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েছেন। আমি ও তো এই নিয়মের বাহিরে নই। ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল মা বাবা।

লেখক-মোঃ এরশাদ মিয়া
বি.এ অনার্স এম.এ (দর্শন)
সহকারী শিক্ষক, হাজী ইউসুফ আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।