সুনামগঞ্জে গণজাগরণের সাংস্কৃতিক উৎসবে প্রধান ৩ মরমী সাধক উপেক্ষিত

প্রকাশিত: ৭:১৪ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৮, ২০২৩

সুনামগঞ্জে গণজাগরণের সাংস্কৃতিক উৎসবে প্রধান ৩ মরমী সাধক উপেক্ষিত

বিশেষ প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে পরিচালিত জাতীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান “গণজাগরণের সাংস্কৃতিক উৎসব” এ জেলার প্রধান ৩ মরমী সাধক উপেক্ষিত হয়েছেন। তাঁরা হলেন,মরমী কবি হাছন রাজা,গানের সম্রাট বাউল কামাল পাশা ও জ্ঞানের সাগর দূর্বিণ শাহ। জেলার ৫ প্রধান লোককবির গান যতœ সহকারে সবগুলো সরকারী অনুষ্ঠানে পরিবেশনের জন্য জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সিদ্বান্ত থাকলেও এবার উপেক্ষিত হলেন তাঁরা। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বেলা ৪ টায় সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির হাছন রাজা মিলনায়তনে মহতি এ অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। ৫ প্রধান লোককবির মধ্যে বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের ৩টি গান পরিবেশন করা হলেও নৃত্য ও গানের অনুষ্ঠানে অধিকাংশ গান পরিবেশন করা হয় বৈষ্ণব কবি রাধারমন দত্তের। জেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা জেলা কালচারাল অফিসার আহমেদ মঞ্জুরুল হক চৌধুরী পাভেলকে বারবার অনুরোধ জানানোর পরও তিনি তার একক সিদ্বান্তমতে পুরো অনুষ্ঠানটি নিজের ব্যক্তিগত মনগড়ামতেই সম্পন্ন করেন।

উল্লেখ্য “অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় শিল্প নিয়ে পৌঁছে যাবো আমরা উন্নতির শিখরে” এই শ্লোগান নিয়ে সারাদেশের ন্যায় সুনামগঞ্জে গণজাগরণের সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বেলা ৪ টায় সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির হাছন রাজা মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠান চলে। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালী মাধ্যমে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।

প্রসঙ্গত,শিল্প সংস্কৃতিঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গড়ার অভিলক্ষ্যে ‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় শিল্প নিয়ে পৌঁছে যাবো আমরা উন্নতির শিখরে’এই প্রতিপাদ্য নিয়ে গণজাগরণের শিল্প আন্দোলন কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। শিল্পের সকল শাখার সমন্বয়ে দেশব্যাপী বহুমুখী সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞের বাস্তবায়িত রুপ ‘গণজাগরণের সংগীত’এই সামগ্রিক উন্নয়ন পক্রিয়ায় সর্বসাধারণকে সম্পৃক্ত ও অনুপ্রাণিত করতে ৫ শতাধিক শিল্পীদের অংশগ্রহণে ২-১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত চলছে ‘গণজাগরণের সংগীত উৎসব। এরই ধারাবাহিকতায় ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে সকল বিভাগ ও জেলাগুলোতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে উৎসবটি। এরই অংশ হিসেবে ৮ ডিসেম্বর সিলেট বিভাগের সকল জেলায় একযোগে অনুষ্ঠিত হয় ‘গণজাগরণের সাংস্কৃতিক উৎসব’। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। তিনি বলেন,সংস্কৃতি চর্চা মানেই সুন্দরের চর্চা,সুন্দর কল্যাণই সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম উপাদান’। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নে ও জাগরণ তৈরীতে শিল্পীরাই অন্যতম ভুমিকা পালন করবে’। জেলা শিল্পকলা একাডেমির ব্যাবস্থাপনায় সারাদেশে ৬৪ জেলায় ধারাবাহিকভাবে এ উৎসব আয়োজন চলছে।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামছুল আবেদীন বলেন,কিভাবে কাদেরকে সম্পৃক্ত করে মহতি এ অনুষ্ঠানটি করা হয়েছে তা আমি জানিনা। আমি অন্যকাজে ব্যস্ত থাকায় প্রোগ্রামে থাকতে পারিনি। এছাড়া এই খাতে শিল্পী সম্মানীসহ আর্থিক বিষয়াদির ব্যাপারে আমি মোটেই ওয়াকিবহাল নই। তবে জেলার ৫ প্রধান মরমী সাধকদের জাগরনী গান পরিবেশনের পাশাপাশি তাঁদের নামে পরিচালিত সংগঠনগুলোকে প্রাধান্য দেয়া উচিত ছিল।

বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি বাউল শাহজাহান বলেন,জেলা গীতিকার ফোরামকে মাত্র একটি দলীয় গান পরিবেশনের সুযোগ দেয়া হলেও স্থানীয় কোন বাউল সংগঠন এবং বাউল শিল্পীদের গান পরিবেশনের কোন সুযোগ দেয়া হয়নি ঐ উৎসবে। বিশেষ করে ৩ মরমী সাধককে উপেক্ষা করে চরম অন্যায় ও দৃষ্টতা প্রদর্শন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন,সুনামগঞ্জ জেলায় উৎসবটি হয়েছে জেলা শিল্পকলা একাডেমির হাছনরাজা মিলনায়তনে। হাছনরাজার পরিবারের একজন লোক অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন অথচ পৌনে ৫ ঘন্টাব্যাপী অনুষ্ঠানটিতে হাছনরাজার একটি গানও পরিবেশন করা হয়নি। এটি নি:সন্দেহে বড়ই দু:খজনক ও সাংস্কৃতিক ব্যাভিচার বলে আমি মনে করি।
বাউল কামাল পাশা সংস্কৃতি সংসদ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাংবাদিক বাউল আল-হেলাল বলেন,আমি জেলার একজন সক্রিয় গীতিকার ও জেলা গীতিকার ফোরামের সহ-সভাপতি পদটিতে সক্রিয় থাকায় প্রবীণ বাউল তছকীর আলীর নেতৃত্বে আমরা বাউল স¤্রাট শাহ আব্দুল করিমের একটি গানকে দলীয় সংগীত হিসেবে পরিবেশন করেছি। কিন্তু ৫ প্রধান লোককবির মধ্যে ঐ অনুষ্ঠানে উপেক্ষিত ৩ মরমী সাধক জনগনকে জাগরণের অগ্নিমন্ত্রে উজ্জীবিত করতে অনেক গান লিখেছেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই তাদের গান পরিবেশন করা উচিত ছিল। কারণ তাঁদের নামেই সুনামগঞ্জের পরিচয় হয়েছে সারাবিশ্বে। তাঁদের গান বাদ দিয়ে কোন সরকারী অনুষ্ঠান করার চাইতে না করাই ভালো বলে আমি মনে করি। এখানে আরেকটা বিষয় না বললেই নয়,সেটি হচ্ছে এই যে,আমাদের মরমী সাধকরা শারীরিকভাবে হয়তো দুনিয়াতে নেই কিন্তু তাই বলে আমরা এসব মরমী মহাজনদের সাথে বেয়াদবী করতে পারিনা। ইতিমধ্যে আমাদের সামনে অনেক উদাহরন সৃষ্টি হয়েছে যে বা যারাই মরমী মহাজনদের সাথে বেয়াদবী করেছে তাদের পরিণতি মানুষ দেখেছে।

আল-হেলাল
সুনামগঞ্জ
তাং : ৮/১২/২০২৩ইং
মোবাইল : ০১৭১৬-২৬৩০৪৮

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ