জগন্নাথপুরে ৮ মাসেও হয়নি মেরামত, অবর্ণনীয় দুভোর্গ

প্রকাশিত: ৪:০০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৯, ২০২২

জগন্নাথপুরে ৮ মাসেও হয়নি মেরামত, অবর্ণনীয় দুভোর্গ

জগন্নাথপুর সংবাদদাতা :: জগন্নাথপুর উপজেলা সদরের নলজুর নদীর ডাকবাংলো সেতু দেবে যাওয়ার ৮ মাস অতিবাহিত হলেও মেরামতের উদ্যোগ নেতা হয়নি। এতে অবর্ণনীয় দুভোর্গ পোহাচ্ছেন এলাকাবাসি।
এলাকাবাসী, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে নলজুর নদীর ওপর ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে সময় সেতুটির জায়গা নির্ধারণ নিয়ে তৎকালীন জগন্নাথপুর সদর ইউনিয়নের (বর্তমান পৌরসভার) হবিবপুর, জগন্নাথপুর, ইকড়ছই গ্রামের মানুষের মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়।
নলজুর নদীর পূর্ব পাড়ের বাসিন্দা হবিবপুর গ্রামবাসী সেতুটি গুদামের পাশে নির্মাণের দাবি জানান। তবে ইকড়ছই, জগন্নাথপুর গ্রামবাসী সেতুটি নলজুর নদীর ডাকবাংলো এলাকায় করার দাবি জানান। হবিবপুর গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আছাব আলী সেতুটি গুদামের সামনে বাস্তবায়ন করতে ভূমিকা রাখেন।
এদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হারুনুর রশীদ হিরণ মিয়া সেতুটি ডাকবাংলো এলাকায় বাস্তবায়নের চেষ্টা চালান। ক্ষমতার প্রভাব কাটিয়ে আছাব আলী সেতুটি গুদামের সামনে বাস্তবায়ন করেন। এ সময় জগন্নাথপুর বাজারে হারুনুর রশীদ হিরণ মিয়ার নেতৃত্বে সভা করে নিজেদের অর্থায়নে ডাকবাংলো এলাকায় সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯৯২ সালে ব্যবসায়ীদের অর্থে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। সে সময় সেতুর পাঁচটি পিলারও তৈরি করা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে স্থানীয় সাংসদ আবদুস সামাদ আজাদ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তিনি এলজিইডিকে সেতুর অসমাপ্ত কাজ শেষ করার নির্দেশ দেন। এরপর এলজিইডির তত্ত্বাবধানে সেতুর কাজ শেষ হলে ১৯৯৬ সালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ সেতুর উদ্বোধন করেন। সা¤প্রতিককালে নলজুর নদী খননের সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নেশন টেক লিমিটেডের লোকজন সেতুর পিলারের কাছাকাছি খনন করায় সেতুর মাঝখানের দুই পিলার গত ১৭ এপ্রিল দেবে যায়। স্থানীয় প্রশাসন ওই সময় সেতু দিয়ে সব ধরণের চলাচল বন্ধ করে দেয়।
এদিকে সেতুটি চলাচলে অচল হয়ে পড়লে সদরের নলজুর নদীর অপর গুদামের পাশের ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি চলাচলে একমাত্র অবলম্বন হয়ে উঠে। অতিরিক্ত যান চলাচলের চাপে প্রতিদিনই সেতুর দুই পাশের এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এর তীব্রতা শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন জনসাধারণ। এরমধ্যে সেতুটি নতুন করে নির্মাণের জন্য শহরের হেলিপ্যান্ড এলাকায় বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে নদীর দুই পাড়ের লাখো মানুষের দুভোর্গ বাড়বে।
জগন্নাথপুর পৌর শহরের ইকড়ছই এলাকার বাসিন্দা মুজিবুর রহমান মুজিব জানান, ৮ মাস ধরে ডাক বাংলা সেতু দিয়ে সব ধরণের চলাচল বন্ধ রয়েছে। সেতুটি সংস্কারে পৌর কতৃর্পক্ষ কিংবা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর আজও কোন পদক্ষেপ নেননি। ফলে আমরা এলাকাবাসী চরম ভোগান্তিতে পড়েছি। তাঁদের উদাসিনতার কারণে কষ্ট পেতে হচ্ছে আমাদের।
জগন্নাথপুর উপজেলা নাগরিক ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক রোমানুল হক রুমেন বলেন, শহরের ডাক বাংলোর সেতু অচল হয়ে পড়ায় চাপ বেড়েছে গুদামের সেতুতে। এতে করে প্রতিনিয়ত যানজট সৃষ্টি হয়ে জনদুভোর্গ বেড়েছে। বর্তমানে গুমাদের ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি নতুন করে নির্মাণের প্রস্তুুতি চলছে। ফলে নদীর পূর্ব ও পশ্চিম পারের সঙ্গে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। ৮ মাসে আগে দেবে যাওয়া সেতুটি যদি মেরামত করা হতো তাহলে কিছুটা দুভোর্গ লাঘব হতো।
জগন্নাথপুর পৌরসভার মেয়র আক্তার হোসেন জানান, সেতুটি চলাচলে উপযোগি করতে একটি প্রকল্পের আওতাভুক্ত করতে প্রক্রিয়া চলছে।
এলজিইডির জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী সোহরাব হোসেন জানান, সেতুটি দেবে যাওয়া স্থানে নতুন সেতু নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তিনি জানালেন, গুদামের পাশের সেতুর টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ। অচিরেই কাজ শুরু হবে। জনসাধারণের দুভোর্গ লাগবে বিকল্প সেতুর কাজ চলছে।