সুনামগঞ্জে চার মাসে চারবার ভেঙেছে দুই সেতু

প্রকাশিত: ৬:১৪ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৪, ২০২৩

সুনামগঞ্জে চার মাসে চারবার ভেঙেছে দুই সেতু

ভাটির কন্ঠ ডেস্ক :: সুনামগঞ্জ থেকে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার কমাতে কুশিয়ারা নদীর উপর সিলেট বিভাগের বৃহৎ সেতু নির্মাণসহ পাগলা-জগন্নাথপুর সৈয়দপুর সড়কে কাজ হয়েছে ৩০০ কোটি টাকার। কিন্তু দুইটি বেইলি সেতু খুলে আরসিসি সড়ক না করায় সুনামগঞ্জ-পাগলা-সৈয়দপুর-ঢাকা সড়ক বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে।

সময় বাঁচাতে এই পথ ব্যবহারকারী পণ্যবাহী ট্রাক-লরি বিপদগ্রস্ত হচ্ছে। গেল বছরের সাত নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুশিয়ারা সেতু উদ্বোধন করে সড়ক খুলে দিলেও সড়কটি সুনামগঞ্জবাসীর আকাঙ্খা পূরণ করতে পারেন নি। গেল চার মাসে এই সড়কে থাকা দুই সেতু চারবার ভেঙেছে।

সর্বশেষ মঙ্গলবার বিকালে একটি সিমেন্টবাহী ট্রাকসহ বেইলি সেতু কাটাগাংয়ে পড়েছে। এখানে চালকসহ দুইজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর এই সড়কের দুইটি বেইলি সেতু ভেঙে দ্রুত আরসিসি করার দাবি তুলেছেন সর্বস্তরের সুনামগঞ্জবাসী।

পাগলা-জগন্নাথপুর-সৈয়দপুরের সড়কে বিভাগের দীর্ঘ রানীগঞ্জ সেতুসহ ৩৬ কিলোমিটার অংশ সুনামগঞ্জ জেলার সীমানায় এবং বাকী ১০ কিলোমিটার হবিগঞ্জ জেলার সীমানায় পড়েছে। গেল সাত নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রানীগঞ্জ সেতু ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন। এরপর এই সেতু ও সড়ক দিয়ে আন্ত:জেলা বাসসহ মালবাহী ট্রাক, কার্গো চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এই সড়কের শান্তিগঞ্জ (বমবমি এলাকায়) এবং জগন্নাথপুর উপজেলার (কাটাগাং এলাকায়) সীমানার দুইটি বেইলি সেতু গেল চারমাসে চারবার ভেঙে এক থেকে পাঁচ দিন করে যান চলাচল বন্ধ ছিল।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, কাটাগাং বেইলি সেতু এর আগে আরেকবার গেল ১৬ জুলাই ভেঙেছিল। এর আগে গত ২৮ মার্চ সুনামগঞ্জগামী একটি তেলবাহী লরি সড়কের শান্তিগঞ্জ এলাকার বমবমি বেইলি সেতু পার হবার সময় তিনটি পাঠাতন ভেঙে যায়। একারণে সুনামগঞ্জমুখী শতাধিক মালবাহি ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, যাত্রীবাহী বাস ও লেগুনা প্রায় সাত ঘণ্টা আটকা পড়ে সড়কে। এরপর ছয় এপ্রিল একইভাবে আবার এই সেতুর দুটি পাঠাতন ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। ভোগান্তিতে পড়েন সড়কে চলাচলকারী যানবাহন চালক ও যাত্রীরা।

রাজধানী ঢাকা থেকে পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যান নিয়ে আসা চালক শফিকুল ইসলাম বললেন, ‘৩০০ কোটি টাকা খরচ করে সড়ক ও কুশিয়ারা সেতু হয়েছে। আমরা ঢাকা থেকে কম সময়ে সুনামগঞ্জে পৌঁছাতে এই পথ ব্যবহার করি। কিন্তু দুইটি বেইলি সেতুর কারণে এখানে বার বারই বিপদে পড়তে হয়। গেল রমজানের সময় ব্যবসায়ীদের মালামাল নিয়ে এসেছিলাম, সকাল থেকে বমবমি সেতুর পাশে বসেই দিন পার করেছি। এভাবে বিপজ্জনক থাকলে মালবাহি ট্রাকগুলো এদিকে আসতে না দিলেই হয়।’

ট্রাক চালক রবিউল আলম বললেন, কম সময়ে তেল বাঁচিয়ে এই পথে সুনামগঞ্জ যাওয়ার লোভে এদিকে আসি। পথটি এখন আর আঞ্চলিক সড়ক নয়, মহাসড়কের মত ব্যস্ত, কিন্তু এটি কর্তৃপক্ষ চিন্তা করেন না, না হয় এভাবে বিপদে পড়তে হতো না।

সড়কের বমবমি সেতু এলাকার ছয়হারা হরিনগরের বাসিন্দা আব্দুর রহমান জামি বললেন, আরসিসি সেতু না হওয়া পর্যন্ত মাল বোঝাই ট্রাকসহ ভারী যানবাহন এই পথে চলাচল বন্ধ করে দিতে হবে। কঠোরভাবে এটি মানা না গেলে, দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে।

জগন্নাথপুরের গণমাধ্যম কর্মী অমিত দেব বললেন, ৩০০ কোটি খরচ করে সড়ক হয়েছে। এখন কয়েক কোটি টাকার জন্য এই সড়কের সুফল পাবে না মানুষ।

সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রাং বললেন, এই সড়কের বমবমি বেইলি সেতু অংশে আরসিসি সেতুর দরপত্র গ্রহণ করা হয়েছে, শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। কাটাগাংয়ের বেইলি সেতুর পাশেও একটি আরসিসি সেতু হবে, এই সেতুর বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। এসব সেতু দিয়ে ১০ টনের অধিক মালামাল বহন না করার জন্য সাইনবোর্ড দেওয়া আছে। পুলিশকেও জানানো আছে। তবুও অধিক পরিমাণ মালামাল নিয়ে ভারী যানবাহন চলছে।

সুনামগঞ্জে কেবল এই দুই বেইলি সেতু নয়, জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে আরও ১২টি বিপদজনক বেইলি সেতু রয়েছে। এরমধ্যে মদনপুর-দিরাই-শাল্লা সড়কে তিনটি, সুনামগঞ্জ-কাছিরগাতি-বিশম্ভরপুর সড়কে ছয়টি এবং জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ সড়কে তিনটি বেইলি সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচলের সময়ে আতঙ্কে থাকেন পরিবহনের যাত্রী-চালকেরা।