প্রতিজ্ঞা

প্রকাশিত: ২:১৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৮, ২০২২

প্রতিজ্ঞা

অমিতা বর্দ্ধন : বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরী থেকে যাওয়া-আসার পথে হাতে থাকা মল্লিকার বইটি পড়ে যায়। কোন কিছু ভেবে ওঠার আগেই সৌরভ তৎক্ষনাৎ উঠিয়ে দেয় এবং দৃষ্টি বিনিময়ের পর দু’জন দু’দিকে চলে যায়। সেদিনের ক্লাস শেষে সৌরভ হলে গিয়ে মল্লিকার দৃষ্টি নন্দন চুম্বক চাহনী মনকে অজানা আকর্ষণে দুলায়িত করতে থাকে। এভাবে চলতে থাকে কিছুদিন দু’জন একই সাবজেক্ট নিয়ে সমবর্ষে পড়ছে বিধায় ক্লাসে দেখাদেখি হচ্ছে মাঝে মাঝে স্টাডি নিয়ে কথাও হচ্ছে। সৌরভ পড়ালিখায় সর্বোচ্চ মান রেখে আসছে তাই সবারই দৃষ্টি এড়াতে পারছে না সৌরভ। এদিকে সেমিস্টার সামনে থাকায় মল্লিকা নোটের জন্য সৌরভের সাহায্য চায়। সৌরভ তারিখ ও স্থান নির্ধারণ করে দেয়। সাথে সময় ও বলে দেয় ক্যাম্পাসের বাহিরে নির্ধারিত পার্কে। মাহেন্দ্রক্ষণে চার চোখের পুনঃমিলন হলো বটে তবে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে। দু’জনের মনেই বসন্তের হাওয়া বইছিল। অজানা শিহরণে দু’জনই আন্দোলিত ও পুলকিত। একে অন্যের নীরভ চাহনীর পর্ব ভেঙ্গে অবশেষে মল্লিকাই বলে উঠলো। কেমন আছ? সৌরভ- “ভালো, এই মূহুর্তে”। ওরা দুজনে বসেছিল একটি বেঞ্চে যার উপরে ছিল একটি বকুল ফুলের গাছ, মৃদু মন্দ হাওয়ার বিকেলের সাজটি বেশ ছিল, কয়টি ফুল ঝরে পড়ায়, মল্লিকা কুড়িয়ে নিয়ে হাত বাড়িয়ে সৌরভকে বলে ছিল-“এই নাও আজকের মতো এটুকুই”। একগাল মুচকি হেসে সৌরভ সযতনে বুক পকেটে রেখে দিল। সে সময়ে মল্লিকার হাতের পরশটুকু সৌরভের অনুভূতিতে শিহরণ জাগায়। নোট নিয়ে মল্লিকা বিদায় নিল আর সৌরভ মল্লিকার সৌরভ নিয়ে হলে ফিরে পুলকিত হৃদয়ে। দুজনের মনেই ভালোবাসার বীজ রোপন হতে থাকে। এই ভাবে মাঝে মাঝে ওরা প্রায়ই নির্জনে বসে ও মনের অব্যক্ত ভাব বিনিময় হতে থাকে। ক্রমে এটা নেশায় পরিণত হতে থাকে। রূপ নেয় ভালোবাসা প্রেমে। কিন্তু বাধা হয় দুজনার পারিবারিক অবস্থান। মল্লিকার আভিজাত্যের আবরণে জীবন। বাবা স্বনামধন্য শিল্পপতি। আর সৌরভ ছোটবেলায় মা হারায়। বাবা ভাই-বোনদের মানুষ করতে দ্বিতীয় বিবাহ করেন। একজন আদর্শ মানুষ গড়ার কারিগর স্কুল শিক্ষক। গ্রামীণ জীবনে অভ্যস্ত। পড়াশুনার লক্ষ্যে সৌরভ ঢাকা চলে আসে, মেধাবী ছিল বলে খরচ চালাতে তেমন বেগ পেতে হয়নি সৌরভের। টিউশনি করে সাদামাটা জীবন চাকাকে সচল রেখেছে। আত্মার খোরাক যাকে বলে মায়া-মমতা ও ভালোবাসা তার জীবনকে স্পর্শ করেনি বলে বিমর্ষতা ও একাকীত্ব সৌরভকে গ্রাস করতো অহর্নিশি। বিশ্ববিদ্যালয়ে তার তেমন কোন বন্ধু সমাজ গড়ে নিতে পারেনি। নিজেকে হাসি, গান ও আড্ডা থেকে দূরে রেখেছে। কারণ আনন্দে গা ভাসাতে টাকার দরকার যা তার আয়ত্বে নেই। তাই তার ব্যক্তি জীবন অন্যদের থেকে আলাদা। ক্লাশ শেষে টিউশনি ও পড়া নিয়ে তার জগত। মা বিহীন অন্ধকার জীবন তার সঙ্গী। যেখানে রয়েছে কেবল দীর্ঘশ্বাসের অতৃপ্ত বাতাস। তাই মাঝে মাঝে যখন নিজেকে কন্ট্রোল রাখতে হিমশিম খেতে হতো তখন ধুমপানের সাহায্য নিতে হতো। মল্লিকার জীবন আভিজাত্যে ভরপুর। ফলে মল্লিকা যতই ভাবাবিষ্ট হতো সৌরভ না বুঝার ভান করতো, নিজেকে একটু আলাদা রাখতে চেষ্টা করে। আদরের দুলালী মল্লিকা বাস্তবের রূঢ় রূপ কখনো চিন্তাই করতে পারেনি। তাই সে প্রেমের জ্বাল বুনতে শুরু করে ও স্বপ্নে বিভোর রাখে নিজেকে। এক বিকালে রবীন্দ্র সরোবরের পাড়ে দুজন বসে ক্লাশের গল্পে মত্ত, এদিকে বাদাম ওয়ালা ছেলেটি কাছে এসে বলছে- “আফা! বাদাম খেয়ে খেয়ে গল্প করেন”। মল্লিকা এটাকে খুব সানন্দে গ্রহণ করে বাদাম ছিলে সৌরভের হাতে দিচ্ছে, সৌরভও তাকে দিচ্ছে। সরোবরের ঢেউগুলো মল্লিকার মনের অনুভূতিকেই জানান দিচ্ছে। সেই ভাবটি সে প্রকাশ করেছে সৌরভকে। বিকেলের ঝিরি ঝিরি বাতাসে সরোবরে বয়ে যাওয়া ঢেউকে দেখিয়ে মল্লিকা বলছে, আচ্ছা সৌরভ “আমরা কবে এভাবে বয়ে যাব? তোমার ভাবনায় কি এমন হাওয়া বইছে না? সৌরভ চুপ করে শুধু মাথাটি নেড়েছে আর মল্লিকার চোখের দিকে নীরব দৃষ্টি রাখে কিছুক্ষণ। মল্লিকা বলছে এ্যাই কি দ্যাখছ? ওমন করে? কিছু বলো? সৌরভ নীরবতা ভেঙ্গে গানের কলিটি উচ্চারণ করলো তাকিয়ে- “যে আখিঁতে এতো হাসি লুকানো কুলে কুলে কেন তার আঁখি ধার যে মনে আছে এতো মাধুরী সে কেন বয়ে চলেছে ব্যাথা ভার—। পরে দুজনই চোখের ভাষায় মনের বাগানে ফুল ফুটালো। একটি মিষ্টি ভালোবাসার আবেগ আবেশে মন নিয়ে দুজন দুই দিকে চলে যায়। হলে এসে সৌরভ মনের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। কিভাবে সে মল্লিকার ভালোবাসার মূল্যায়ন ঘটাবে। ভেবে ভেবে রাত প্রহরের পর প্রহর হচ্ছে চোখের পাতায় ঘুমের রাণী আসছে না। উপায়ান্তর না দেখে অবশেষে ধুমপানে নিজেকে দুশ্চিন্তায় মুক্ত রাখতে আশ্রয় খুঁজে। এক ক্লান্ত দেহ মন বিছানায় জড়িয়ে দেয় ঘুমের জগতে। এদিকে মল্লিকা ভয়ংকর ভালোবাসার জ্বালে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে, স্বপ্নের রাজ্যে হাজারো কল্পনা নিয়ে বিভোর। ছোট ছোট এস এম এসে প্রেমের কলি ফুঠিয়ে পাঠাতে থাকে সৌরভকে। মনের রাজ্যে সে আজ রাণী সেজেছে। কখনো গুন গুনিয়ে গাইছে আপন মনে প্রেম দেবতাকে উদ্দেশ্য করে- “মধুর তোমার শেষ যে না পাই প্রহর হলো শেষ ভুবন জুড়ে রইল লেগে আনন্দ আবেশ”। দেহ মনে এক অজানা আবেশে কখন যে রাত প্রহর হয়েছে মল্লিকা বুঝে উঠতে পারেনি। ক্লাশে যাবার তাড়া নিয়ে ক্যাম্পাসের দিকে তৃষিত আখিঁতে সৌরভকে খুঁজে নেয়। সেদিন দুজনে ক্লাশ নামমাত্র সেরে নেয়। পরে ক্যাম্পাসের এক নিরিবিলি স্থানে দুজন বসে, মল্লিকা লক্ষ্য করলো সৌরভের চোখ দুটি রক্ত রাঙ্গা, চোখের নীচে কালিমার চাপ। খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছিল সাথে একটু অস্বাভাবিক এলোমেলো আচরণও কথার ভঙ্গিতে। মল্লিকার মনে একটু চিন্তার সঞ্চার হলো। সেদিনের মতো দুজন গন্তব্যে চলে যায়। রাতে মল্লিকা কল দিয়েছে কারণ জানার জন্য কি হয়েছে তার, সৌরভ একরাশ বিষণ্নতায় ভুগে শান্তির আশ্বাসে মাদকের আশ্রয় নিল, সাথে ফোন সাইলেন্ট করে অবসাদের মুক্তির দিকে ঝুকে পড়লো। এদিকে মল্লিকা কল, এস এম এস দিয়ে কোনও সাড়া না পেয়ে অস্থিরতাপূর্ণ রাত কাটালো। কখন ভার্সিটিতে যাবে। না সেদিন সৌরভ ভার্সিটিতে যায়নি, এই তার প্রথম ক্লাস মিস দেওয়া। লেখাপড়ায় ভার্সিটিতে সেরা ছাত্র বিধায় সেটা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। মল্লিকা আর পারছে না নিজেকে সংযত রাখতে, ক্লাস মিস দিয়ে ক্যাম্পাসে এসে কল দিল- সৌরভ ততক্ষণে ফোন খুলেছে, কল বেক করেছে। এই অস্বাভাবিক আচরণ ও কতাবার্তা মল্লিকার চিন্তার জগতে এক ঝড়ের জন্ম দেয়। ভেবে পায় না মল্লিকা কি কারণে সে সেই সৌরভকে আবছা দেখছে! পরদিনও ক্লাস মিস দিয়েছে সৌরভ। মল্লিকা সিদ্ধান্ত নেয় সৌরভকে নিয়ে লং ড্রাইভে যাবে সবকিছু আজ খুলে জানতে হবে। এসবের পিছনে কি রহস্য। এক আবীর রাঙ্গা বিকালে একটি নির্জন স্থানে ঝিলের দিকে দুজনের আঙ্গুল জড়িয়ে হাঁঠতে থাকে। হঠাৎ মল্লিকা সৌরভের দিকে তাকিয়ে কবিতার সুরে বলছে- “দুজনার হাতের আঙ্গুলের বন্ধন ছুটে যাক ক্ষতি নেই কিন্তু আমাদের হৃদয়ের বন্ধন কখনো যেন না ছুটে যায়। তোমার দূরত্ব আমাকে ব্যথার আগুনে পুড়ায়। কত বেদনাময় বিনিদ্র রজনী পার করেছি, “ঝিলের পাড়ে অবশেষে দুজন কিছুক্ষণ বসে। হঠাৎ, মাটিতে দেখে কয়টি চাপা ফুল, মল্লিকা উপরে তাকিয়ে দেখে মাথার উপরে একটি চাপা ফুলের গাছ। ফুল কুড়িয়ে মল্লিকা সৌরভকে হাতের মুটিতে গুজে দেয় আর বাকী ফুল বুকের পকেটে গুজে দেয়। এমন সময় একটি ছোট বালিকা ওদের কাছে এসে বলছে- ”আফা একখান মালা নেইন, আমি আইজ কিছু খাই নাই, পেট জ্বলছে ক্ষিদার জ্বালায়, আফনার টাহা দিয়া নাস্তা খাইমু।” সব শুনে সৌরভ মালাটি কিনে, মল্লিকার মানসিকতা ভাল ছিলনা ব্যাগে টাকা যা সামান্য ছিল, তাই নিয়ে এসেছে। আর সৌরভকে একটু যাচাই করার জন্য ও মল্লিকা একটু সুযোগ নিয়েছে। ইচ্ছে ছিল সৌরভ এই মালাটি তার চুলে পড়িয়ে দেবে কিন্তু হাতে দেওয়াতে মল্লিকা কষ্ট পেল। সব রকম আচরণেই মল্লিকার সন্দেহের বীজ বুনতে থাকে সৌরভের। আগের সেই রোমান্টিকতা ও হাস্য উজ্জ্বল স্বভাবটি সৌরভের আচরণের মাঝে আর দেখতে পায় না মল্লিকা। এক সময় মল্লিকা ঝিলের জলে ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে ভাবছে আর সৌরভকে দুষ্ঠুমি ছলে খানিক ধাক্কা দিয়ে বলছে, আঙ্গুল দেখিয়ে- এই দেখ? “জল ও ঢেউয়ের প্রণয় কত অসীম? বিনিদ্র রজনী ওদের নাই”। সৌরভ অন্যমনস্কভাবে বলছে “তাইতো?” এভাবে দুষ্টু মিষ্টি একটু খুনটুসিতে কিছু সময় কেটে যায়। হঠাৎ ঝিলের জলে পূর্ণিমার চাঁদের আলো ঝিলিমিলি ঢেউয়ের খেলা দেখে সৌরভের সম্ভিৎ ফিরে আসে, এদিকে নেশার ঘোর কেটে যাবার সময় এসেছে যন্ত্রণা বেড়েছে তাড়া দিচ্ছে যাবার, অন্যদিকে মল্লিকার জগতে মনের সরোবরে এই অপরূপ দৃশ্যে ভাবিকালের অনাগত দিনগুলির ঢেউ ধাক্কা দিচ্ছে তার ভাবিন্দ্রিক ভাবনায়- “আলো আধারের লুকোচুরি এই খানেই প্রাণের নগর, যেখানে সুবাস একাতরে বিলায় জুঁই, চামেলী আর টগর”। ভালো লাগার কিছু স্বপ্ন মন ছুঁয়ে যায়, ভালো লাগার কিছু গল্প জীবন রাঙ্গায়, ভালো লাগার কিছু মানুষ কখন যে আপন হয়ে যায়, ভুলতে চাইলেও ভুলার মতো নয়। এদিকে সৌরভ নিজের সাথে আর বোঝা-পড়া করে বার বার ব্যর্থ হয়ে মাদকের আশ্রয় নিয়ে চরম শান্তির ঘোরে বিভোর রাখছে নিজেকে। ক্লাশ আর মোবাইল নেট অফ করে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রেখেছে। ভেবে নিয়েছে মল্লিকাকে সে তার ছন্নছাড়া জীবনে যুক্ত করবে না। দুচোখ বেয়ে প্রেমাশ্রু বয়ে চলেছে অঝোর ধারায়! এমন সময় মল্লিকা রুমে এসে পাশে দাঁড়িয়ে অবাক ও বিস্ময়ে তাকিয়ে ব্যাগ থেকে টিসু দিয়ে চোখ মুছিয়ে পরিবেশকে স্বাভাবিক করে হাসি দিয়ে কবিতার লাইনগুলো মিষ্টি করে বলছে- নয়ন জলে ভাসিয়ে দুচোখ কাঁদছো কেন তুমি? চেয়ে দেখো তোমার পাশে দাঁড়িয়ে আছি আমি—- অবশেষে দুজনই পরিবেশকে বদলিয়ে দিল প্রেমের আবেগে। মল্লিকাকে দেখে প্রথমে অবাকই হলো সৌরভ যেন অপ্রত্যাশিত আগন্তুক। সৌরভ কিচেনে গেল চায়ের উদ্দেশ্যে। এরই ফাঁকে মল্লিকা রুমের চারিপাশ ও বিছানা এলোমেলো দেখে গুছাতে গিয়ে নেশা জাতীয় কিছু পিল/ট্যাবলেট দেখে বিমুর্ষ হয়ে হতাশ! মনে মনে সে প্ল্যান নেয়। চা পানে দুজনাই খুব আবেগী হয়ে সময় পার করলো। মল্লিকা নেশার বিষয় কিছুই বুঝতে দেয়নি কোন আবাশ না দিয়ে শুধালো পরেরদিন ওরা একটা নির্জনে বেড়াতে যাবে। সেদিন এইটুকু আশ্বাস নিয়ে মল্লিকা চলে আসে নীরবে। মনের জগতের উষ্ণ হাওয়া সৌরভকে বুঝতে দেয়নি। খুব হতাশাগ্রস্থ মন নিয়ে সারারাত মল্লিকা ভেবে ভেবে চোখের পাতা সংযুক্ত করতে পারেনি। অবশেষে কবিগুরুর আশ্রয়ে শান্তি খুঁজে ভাবছে- “কে দেয় আমার বীণার তারে এমন ঝঙ্কার নয়নের ঘুম নিল কে কেড়ে ওঠে বলি শয়ন ছেড়ে— মল্লিকা ভাবছে যেদিন সৌরভ প্রতিজ্ঞা করেছিল নেশা জাতীয় আর কিছুই নেবে না। সৌরভ কথা রাখেনি হতাশ হলো। সৌরভ ঘরের সবকিছু গুছানো দেখে বুঝে নিতে কষ্ট হয়নি যে মল্লিকা সব দেখে নিয়েছে। পরে ওরা বাহিরে যায় হাঁটতে গিয়ে মল্লিকা মাথা ঘুরে পড়ে যায়। পরে স্থানীয় ক্লিনিকে নেয়া হয়। সৌরভ মল্লিকার এই আকস্মিক অসুস্থতায় নিজেকে অপরাধী বলে অনুতাপ করছে যে সে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করাতেই মল্লিকা আজ অসুস্থ হয়েছে। কিছুক্ষণ পর মল্লিকা দেখতে পায় সৌরভ কাঁদছে, সহ্য করতে না পেরে তার ফন্দি, ভান ও অভিনয়ের ব্যাপারটি বলে দিল। সৌরভ আবারও প্রতিজ্ঞা করলো আর কখনো কোনদিন মাদক নেবে না। পরে মল্লিকাকে তার পারিবারিক অবস্থানের কথা খুলে বলে। মল্লিকা হাত বাড়ায় আশ্বাসের? প্রকৃত ভালোবাসার কাছে সবই হার মানে। ভালোবাসার শক্তির প্লাবনে সব বাধা ভেঙ্গে যায়। এখানেই ভালোবাসার জয়, ভালোবাসার বাস্তব রূপ। মল্লিকা পারতো প্রেমের বিচ্ছেদ ঘটিয়ে সরে যেতে কিন্তু তাতে সৌরভ আরো মাদকে আসক্ত হতো একটি জীবন বিফল হতো। কারণ মাদক লিভার নষ্ট করে ক্যান্সারে রূপ নেয় আর ক্যান্সার মানেই নিশ্চিত মৃত্যু। শাসন করে ভালোবাসা দিয়ে সব জয় করা যায়। তাই স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন- শাসনের হাতিয়ারের চেয়ে ভালোবাসার তলোয়ার অনেক ধারালো! মাদককে না বলি! মল্লিকা ফুল হয়ে সৌরভ ছড়ালো। কবির ভাষায়-
“সকল দোয়ার আপনি খুলিল
সকল প্রদীপ জ্বলিল
.নব বীণা বাজিল নব নব সুরে।”
লেখিকা : প্রাবন্ধিক ও গল্পকার কবি অমিতা বর্দ্ধন

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ