বিজয়ের মাস ডিসেম্বর ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হয়নি

প্রকাশিত: ১১:০২ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ৮, ২০২২

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হয়নি

ডেস্ক নিউজ: একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঘটনা। এর একটা পটভূমি আছে। ১৯৫০-এর দশক থেকেই আমাদের স্বাধিকার চেতনার স্ফুরণ ঘটতে থাকে। ষাটের দশকের শেষ ভাগে সেটা তীব্র হয়ে ওঠে। মানুষের আকাঙ্ক্ষার ধরনটি কী, তার কিছু লক্ষণ এ সময়ে আওয়ামী লীগের ছয় দফা এবং ছাত্রদের ১১ দফায় প্রকাশ পায়। কিন্তু ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অসংখ্য নিরস্ত্র নিরীহ মানুষকে হত্যা করার পর পুরো পরিস্থিতি বদলে যায়। মুক্তিযুদ্ধকে আমরা জনযুদ্ধ বলি।

কারণ এর পর শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত পুরুষ-নারীনির্বিশেষে দেশের সম্পূর্ণ জনগোষ্ঠী এতে জড়িয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আরও বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিতে আগের আকাঙ্ক্ষার রূপান্তর ঘটে। আমরা বুঝতে চাই, সে জনযুদ্ধে মানুষের সম্পৃক্ততার পেছনে তাদের প্রেরণার জায়গাটা কী ছিল? যদি আমরা সাধারণভাবে বলি যে তারা ‘স্বাধীন দেশ’ চেয়েছিল, তাহলে সেই ‘দেশ’-এর রূপটি তাদের মাথায় কী ছিল? কিংবা ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ বলতে আসলে আমরা কী বোঝাতে চাই।

আমরা বুঝতে চাই, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেসব আকাঙ্ক্ষা বা চেতনার বাস্তবায়ন আদৌ ঘটেছিল কি না, ঘটতে শুরু করেছিল কি না। অংশত কিছু যদি ঘটে থাকে, স্বাধীনতার পরের ইতিহাসের মধ্য দিয়ে—সেনা অভ্যুত্থান, স্বৈরাচার প্রভৃতির ভেতর দিয়ে—তা আবার অপসৃত হয়েছে কি না। এ সময়ে এসে সেগুলো থেকে ফিরিয়ে আনার কিছু আছে কি না, কিংবা মুক্তিযুদ্ধের কাছ থেকে নতুন কিছু নেওয়ার আছে কি না, কিংবা আনার উপায় কী।

মুক্তিযুদ্ধ কি নয় মাসের ব্যাপার, নাকি আরও আগে থেকে এর প্রসঙ্গ টানতে হবে? একাত্তরের মার্চ মাসে যে অসহযোগ আন্দোলন হলো, সেটিকে তো মুক্তিযুদ্ধের একেবারে পূর্বপ্রস্তুতিই বলা যায়। মুক্তিযুদ্ধ শুধু নয় মাসের ব্যাপার নয়, তার আগের অনেক ঘটনা রয়ে গেছে। প্রত্যাশার কথা যদি বলেন, ১৯৭০-এ নির্বাচন হলো, সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যে ইশতেহার ছিল সেখানে অনেক কিছুই ছিল। একটা হলো ছয় দফার বাস্তবায়ন। ছয় দফার মূল কথাটা হচ্ছে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন।

পরে আমরা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লাম। যুদ্ধ জয়ের পর দেশ যখন স্বাধীন হবে, আমরা কী চাইব সেটা ওই সময়ে নতুন করে বলার কোনো সুযোগ বোধহয় ছিল না। যুদ্ধ পরিচালনা ও সংগঠিত করা, আন্তর্জাতিক সাহায্য-সমর্থন আদায় করা—এসবই তখন বড় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বাহাত্তরে সংবিধান রচিত হলো। আমাদের আকাঙ্ক্ষাগুলো একেবারে পরিণত এবং স্পষ্টতম রূপ পেল সেই সংবিধানে। সংবিধান আমাদের শুধু একটা গণতান্ত্রিক দেশ দিচ্ছে না, একটা সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশ দিচ্ছে।